নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সানাউল্লাহ নূর বাবু হত্যা মামলার ১৫ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ২০১০ সালের ৮ অক্টোবর সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন তিনি। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ১৫ বছর পার হলেও বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি, যা স্থানীয় জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ২৯ জুন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) নাটোর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর আগে থানার পুলিশ ও র্যাবসহ মোট ৯ জন তদন্ত কর্মকর্তা এ মামলাটি তদন্ত করেছেন।
অভিযোগপত্রে বনপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম জাকির হোসেন, মাঝগাঁও আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খোকন মোল্লা, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কে এম জিল্লুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামসহ মোট ৪৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। তবে তদন্ত চলাকালে আসামি বাদশা মিয়া মারা যাওয়ায় তার নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়।
মামলার আইনজীবী শরিফুল ইসলাম মুক্তা বলেন, ‘সিআইডি যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আমরা নারাজি আবেদন দিয়েছিলাম। নাটোর আদালতে আবেদনটি বাতিল হওয়ায় হাইকোর্টে আবেদন করেছি, যা বর্তমানে অপেক্ষমাণ রয়েছে।’
মামলার বাদী ও নিহতের স্ত্রী মহুয়া নূর কচি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর সিআইডি প্রতিবেদন জমা দেওয়ায় প্রথমে খুশি হয়েছিলাম, কিন্তু প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুতে অসংলগ্নতা থাকায় আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। তাই আমরা নারাজি দিয়েছি।’
উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল কাদের মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে হত্যা করার পরও খুনিরা আজও স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটি বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করছে। আমরা দ্রুত বিচার ও খুনিদের ফাঁসি দাবি করছি।’
এদিকে, নিহত সানাউল্লাহ নূর বাবুর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে বনপাড়া বাজারের শহীদ বাবু চত্বরে স্মরণসভা আয়োজন করা হয়েছে। বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুরের জনসাধারণের ব্যানারে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করবেন তার স্ত্রী মহুয়া নূর কচি এবং প্রধান অতিথি থাকবেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান।
২০১০ সালের ৮ অক্টোবর বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া শহরে বিএনপির একটি বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় হামলার শিকার হন সানাউল্লাহ নূর বাবু। জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি ও সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের যোগদানের আগে বাবু মিছিল নিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। ফলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরদিন বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার পরদিন স্ত্রী মহুয়া নূর কচি ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে বড়াইগ্রাম থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতে মোট ৪৫ জনকে আসামি করা হয়।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘসূত্রতা ও তদন্তে জটিলতার কারণে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে, যা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।