নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় মেঘনা নদীর তীরে দেখা মিলেছে বিরল ও বিষধর ‘রাসেলস ভাইপার’ সাপের। সাপটি দেখে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার হরণী ইউনিয়নের চতলার খাল এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী তালহা সিফাত জানান, আমরা কয়েকজন ঘুরতে গিয়ে হঠাৎ একটি বড় সাপ দেখি। পরে সাপটি একটি গাছের গুড়ির পাশে আশ্রয় নেয়। উদ্ধার করার জন্য অনেক জায়গায় ফোন দিয়েছিলাম, কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। অবশেষে কয়েকজন বললেন এটি রাসেলস ভাইপার, তাই সবাই ভয়ে সাপটিকে মেরে ফেলেছে।
উপকূলীয় বনবিভাগ নোয়াখালীর বিভাগীয় কর্মকর্তা আবু ইউসুফ বলেন, রাসেলস ভাইপার সাধারণত শুষ্ক এলাকা ও বনাঞ্চলে থাকে। মেঘনার তীরে এমন সাপের উপস্থিতি অস্বাভাবিক। তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে এখন এ প্রজাতির সাপ দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে বনবিভাগ বা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তাদের খবর দিতে হবে, যাতে সাপটি নিরাপদে উদ্ধার করা যায়।
বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা জানান, রাসেলস ভাইপার ‘চন্দ্রবোড়া’ বা ‘উলুবোড়া’ নামেও পরিচিত। এটি ইঁদুর ও টিকটিকি খেয়ে বেঁচে থাকে এবং বসতবাড়ির আশেপাশে খাবারের খোঁজে চলে আসে।
তিনি বলেন, সাধারণত পদ্মার চরাঞ্চল, নদী অববাহিকা ও বরেন্দ্র অঞ্চলে এই সাপ বেশি দেখা যায়। এটি ডিম দেয় না, বরং একসঙ্গে ৬ থেকে ৬৩টি বাচ্চা প্রসব করে। শরীরের পৃষ্ঠতল বাদামী এবং বৃত্তাকার কালো দাগযুক্ত, মাথায় ‘V’ আকৃতির সাদা রেখা থাকে।
আইইউসিএনের ২০১৫ সালের লাল তালিকা অনুযায়ী রাসেলস ভাইপার বাংলাদেশে সংকটাপন্ন প্রাণি। এই সাপের বিষ ‘হেমোটক্সিন’ হওয়ায় আক্রান্তের দেহের মাংস দ্রুত পচে যায় এবং মৃত্যু ঘটে। তাই কামড়ালে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
জোহরা মিলা আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে এই সাপের কবল থেকে বাঁচার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সচেতনতা। বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী এটি সংরক্ষিত প্রজাতি।