রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম

গভীর রাতে নারীর হাত-পা বেঁধে তুলে নেওয়ার ঘটনা সম্পর্কে যা জানা গেল

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম

ছবি- ফেসবুক থেকে নেওয়া।

ছবি- ফেসবুক থেকে নেওয়া।

রাতের আঁধারে এক নারীকে হাত-পা বেঁধে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এই ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারীকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ সময় কেঁদে কেঁদে ওই নারী চিৎকার করে বলছেন- ‘আমারে বাঁচা, বাঁচা আমারে, আমারে একটু বাঁচা।’

শনিবার (২৯ জুন) মধ্যরাতে ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নের মাঝের দেওর গ্রামে। ঘটনাটি নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক কৌতূহল ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধান করে পুলিশ বলছে, এটি পারিবারিক ঘটনা। 

জানা গেছে, শনিবার রাত দেড়টার দিকে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেন ওই ইউনিয়নের মাঝের দেওর গ্রামের মৃত কাসেম গাজীর ছেলে কামাল গাজী। যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। ভাইরাল ওই ভিডিওর ক্যাপশনে কামাল দাবি করেন- ভিডিওতে যাকে তুলে নেওয়া হচ্ছে, তিনি তার স্ত্রী।

ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘আমার বাড়িতে গিয়ে আমার কলিজা বউকে এভাবে মারতে মারতে হাত-পা বেঁধে নিয়ে গেছে একটু আগে। দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা কামনা করছি। আমার কলিজাটাকে বাঁচান।’

পুলিশ জানায়, ভিডিওতে দেখা যাওয়া নারীর নাম তন্বী বেগম (উম্মে সুলতানা তন্বী)। তিনি একই ইউনিয়নের বাইলাবুনিয়া গ্রামের শাখাওয়াত হোসেন সিকদারের মেয়ে।

স্থানীয়রা জানান, দুই সপ্তাহ আগে কামালের বাড়িতে এসে উঠেছিলেন তন্বী।  কামাল-তন্বীর বিয়ে হয়েছে বলেও শোনা গেছে। কিন্তু শনিবার রাতে জোরপূর্বক তন্বীর পরিবারের লোকজন এসে তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। ওইসময় ভিডিওটি ধারণ করা হয়। তবে ঘটনার সময় কামাল গাজী নিজ বাড়িতে ছিলেন না। কারণ, গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি এলাকায় নেই। তিনি সংগ্রহীত ভিডিও শেয়ার করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কামাল গাজী এবং ওই মেয়ের পরিবার দুই পক্ষ দুই মেরুর রাজনীতি করে। তন্বীর পরিবার স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, আর কামাল গাজী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাঙ্গাবালী উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি।

পুরো বিষয়টি সম্পর্কে রাঙ্গাবালী থানার ওসি এমারৎ হোসেন বলেন, ‘তদন্তে জানা গেছে- কামাল গাজীর সঙ্গে ওই মেয়ের গোপনে বিয়ে হয়েছে নাকি। প্রেমের সম্পর্ক থেকেই এই বিয়ে হয়েছে, এমনটা শোনা যাচ্ছে। তবে বিয়ের কোনো ডকুমেন্টস পাওয়া যাচ্ছে না। ৭-৮ দিন আগে তন্বী এসে কামালের বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু কামাল বাড়িতে ছিলেন না। গত ৫ আগস্টের পর থেকে কামাল এলাকা নেই।’

ওসি আরও বলেন, ‘শনিবার রাতে তন্বীকে তার বাবাসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য জোরপূর্বক নিয়ে যান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তন্বীর বাবা শাখাওয়াত সিকদার, চাচা ছাত্তার সিকদার, মামা জাহিদ হাওলাদারসহ আরও কয়েকজন।

এদের মধ্যে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত লিটু গাজী, মোহসীন হাওলাদার, এরশাদ হাওলাদার এবং স্থানীয় ইউপি  সদস্য (মৌডুবি ৯ নম্বর ওয়ার্ড) ইলিয়াস গাজীও ছিলেন। তবে এটি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়, পারিবারিক ঘটনা। এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।’
  
ফেসবুকে ভিডিও পোস্টকারী কামাল গাজীর সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তন্বীর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। বিষয়টি এলাকার সবাই জানে। কিন্তু তন্বীর পরিবার আমাদের বিষয়টি মেনে নিচ্ছিলো না।’

‘এ জন্য তন্বীকে কোরবানির ঈদের আগে প্রচুর মারধর করেছে। শিকল দিয়ে বেধেও রেখেছিল। পরে ১২ জুন তন্বী আমাদের বাড়িতে চলে আসে। ১৫ জুন অনলাইনে কাজির মাধ্যমে আমাদের কলমা হয় এবং ২০ জুন পটুয়াখালীতে দুই লক্ষ টাকা দেন মোহরে কাবিন হয়।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা বৈধ স্বামী-স্ত্রী। সার্টিফিকেট অনুযায়ী তন্বীর বয়স ১৯ বছর। সে প্রাপ্ত বয়স্ক। আমার কাছে কলমা-কাবিন এবং তার প্রাপ্ত বয়স হওয়ার সব প্রমাণ আছে। তবুও শনিবার রাত ১২ টার দিকে আমার মা-বোনকে মারধর করে আমার স্ত্রীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গেছে।’ 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তন্বীর বাবা শাখাওয়াত হাওলাদার বলেন, ‘আমার মেয়েকে ভুল বুঝিয়ে নিয়ে কামাল গাজী বিয়ে করছে। আমার মেয়ে কামাল গাজীর বাড়িতে চলে গিয়েছিল। পরিবারের অমতে বিয়ে করায় আমি বিয়ে না মেনে শনিবার রাতে গিয়ে আমি, আমার ভাই এবং আত্মীয়-স্বজনসহ মেয়েকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসছি।’

তিনি বলেন, ‘এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৌডুবি ৯ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ইলিয়াস গাজী, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি, ছেলের মা, ছেলের বড় ভাই এবং ছেলের চাচারা। মেয়ে এখন আমাদের হেফাজতে আছে।’

জানা গেছে, ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।  গোপন বিয়ে এবং সামাজিক সম্মানের দ্বন্দ্ব-সব মিলিয়ে বিষয়টি এখন নানা মাত্রায় আলোচিত। 

উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘১০-১২ দিন আগে কামাল গাজীর স্ত্রী পরিচয়ে কামালের বাবার বাড়িতে এসে অবস্থান করে তন্বী নামের মেয়েটি। তবে তাদের মধ্যে যে বিয়ে হয়েছে, এমন কোনো তথ্য এলাকার কারও কাছে নেই বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য আমাকে নিশ্চিত করেছে। কিন্তু মেয়ে নাকি দাবি করেছে তাদের কোর্ট ম্যারেজ হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘শনিবার রাতে পরিবারের লোকজন এসে কামালের বাড়ি থেকে তন্বীকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। মেয়ে যেতে চাচ্ছিল না বলে জানতে পেরেছি। তবে মেয়ে যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে থাকে এবং বিয়ে যদি সঠিক হয়ে থাকে- তাহলে এভাবে জোরপূর্বক নেওয়া ঠিক হয়নি।’

Link copied!