পটুয়াখালী-দুমকি-বাউফল-দশমিনা আঞ্চলিক মহাসড়কে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে ‘চেয়ারম্যান পরিবহন’ নামক যাত্রীবাহী বাস সার্ভিস। গত তিন মাসে শুধুমাত্র দুমকি উপজেলায়ই পরিবহনটির অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সচেতন মহল এসব দুর্ঘটনার জন্য বেপরোয়া গতি, অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত চালক এবং বাসগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতামূলকভাবে চালনা করাকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-দুমকি-বাউফল রুটে সাকুরা, চেয়ারম্যান, কিংস, মুন, অন্তরা ও বাউফল ট্রাভেলসের বাস চলাচল করলেও গত তিন মাসে শুধু দুমকি উপজেলায় চেয়ারম্যান পরিবহনের অন্তত ৫-৬টি বড় দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কিংস পরিবহন।
স্থানীয় ও যাত্রীদের অভিযোগে, দুমকি থানা ব্রিজ এলাকা, রাজাখালী বাজার, নতুন বাজারসহ একাধিক স্থানে স্থানীয়রা বহুবার বাসচালকদের সতর্ক করলেও তাতে কোনো ফল মিলছে না। একদিন বিরতির পরই আবার আগের মতোই বেপরোয়া গতিতে চলছে এসব বাস। বর্তমানে ‘চেয়ারম্যান পরিবহন’ দুমকিবাসীর কাছে এক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে।
সর্বশেষ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে রাজাখালী এলাকায় চেয়ারম্যান পরিবহনের একটি বাস বেপরোয়া গতিতে একটি অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে অটোটি উল্টে পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে গুরুতর আহত হন তিনজন যাত্রী—ফাহাদ মেহেদী (মুরাদিয়া), মমিন মৃধা (আজিজ আহম্মদ কলেজের ছাত্রদল সভাপতি) ও শিক্ষার্থী তাজ।
আহতরা বর্তমানে স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনার পর ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা জানান, বিষয়টি একাধিকবার প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এর আগেও গত ২৫ আগস্ট বাউফলের ডা. ইয়াকুব শরীফ কলেজের সামনে চেয়ারম্যান পরিবহন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
দুর্ঘটনায় আহত ফাহাদ মেহেদী বলেন, ‘বাসটি অতিরিক্ত গতিতে এসে আমাদের অটোরিকশাকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। মুহূর্তেই গাড়িটি উল্টে খাদে পড়ে যায়। আমি ও আমার দুই সঙ্গী গুরুতর আহত হই।’
বিষয়টি নিয়ে বোর্ড অফিস বাজারের ব্যবসায়ী শ্রীকান্ত দাস, তালতলি বাজারের চা দোকানি হিরা হাওলাদার, রাজাখালী বাজারের পারভেজ, দুমকি থানাব্রিজ এলাকার জলিলুর রহমানসহ স্থানীয় অনেকেই চেয়ারম্যান পরিবহনের লাইসেন্স বাতিল বা সড়কে চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
তাদের ভাষ্যমতে, পদ্মা সেতু চালুর পর সড়কপথে যাতায়াত বেড়ে গেছে। কিন্তু এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরও প্রশাসনের নীরব ভূমিকা জনমনে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
জানা গেছে, চেয়ারম্যান পরিবহনের মালিক হচ্ছেন দশমিনা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ইকবাল মাহমুদ লিটন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তিনি এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। তার মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে দুমকি থানার ওসি মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘চেয়ারম্যান পরিবহনের বাসের বেপরোয়া গতি ও দুর্ঘটনার কথা শুনেছি। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। ট্রাফিক বিভাগ বিষয়টিতে নজর দিলে দুর্ঘটনা অনেকটা কমে আসবে।’