ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫

কবরের পাশে পিতার কান্না, পদ্মার ভাঙনে মানবিক বিপর্যয়

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ০৫:৪৪ পিএম
পদ্মায় ভাংছে সন্তানের কবর, শোকে পাথর পিতা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য এলাকাবাসীকে কাঁদাচ্ছে। পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হতে চলেছে খবির সরদারের একমাত্র ছেলের কবর। চোখের সামনে প্রিয় সন্তানের শেষ চিহ্ন মাটির সঙ্গে মিশে যেতে দেখে শোকে পাথর হয়ে গেছেন এই পিতা।

ঘটনাটি গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামের।

প্রায় ১৫ বছর আগে বৈদ্যুতিক শকে মারা যান মফিজ সরদার। তখন তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। কিন্তু পদ্মার ভাঙনে এখন সেই কবরস্থানের অবস্থান চলে এসেছে একেবারে নদীর কিনারায়। যেকোনো মুহূর্তে কবরটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

ছেলের কবরের পাশে খবির সরদার এখন প্রতিদিন বসে থাকেন। কবর আঁকড়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদেন।

এলাকাবাসী জানান, খবির সরদারের এই কান্না ও আর্তনাদে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছে পুরো গ্রাম।

এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে একাধিক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। হুমকির মুখে রয়েছে মুন্সিপাড়া গ্রামের ঈদগাহ মাঠ, কবরস্থান এবং আশপাশের কয়েকটি পরিবার।

স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল ফকির রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এভাবে নদী ভাংতে থাকলে আমাদের বসতভিটা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। প্রশাসনের নজর না পড়লে অচিরেই কবরস্থান, ঈদগাহসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো বিলীন হয়ে যাবে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছর এই এলাকায় ভাঙন বাড়ছে। কিন্তু টেকসই বাঁধ নির্মাণ কিংবা কার্যকর প্রতিরোধমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এবার ভাঙনের কবলে পড়ে মানুষ শুধু ঘরবাড়িই নয়, প্রিয়জনের কবরও হারানোর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল আমিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা লিখিতভাবে জমা দিয়েছি। এখন প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেই মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করা হবে।’

স্থানীয়দের দাবি, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে মানবিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি স্মৃতি ও সংস্কৃতিরও অপূরণীয় ক্ষতি হবে।