ভোরের আলো ফুটতেই রাজবাড়ী স্টেশনে হাঁটতে হাঁটতে ট্রেন ধরতে আসা যাত্রীরা জানেন না- আজও তাদের যাত্রায় দেরি হবে কি না। হয়তো আবারও লোকাল ট্রেনটি এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকবে, কারণ সামনে যে স্টেশন, সেখানে মাস্টারই নেই।
রাজবাড়ী রেলওয়ে সেকশনের ১৪টি স্টেশন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ পড়ে আছে। সূর্যনগর, বেলগাছি, মাছপাড়া, গোয়ালন্দ বাজার, বসন্তপুর, বাখুন্ডা, রামদিয়া... এই সব স্টেশনের নাম শুধু মানচিত্রে আছে, বাস্তবে নেই কার্যক্রম। অনেক জায়গায় টিকিট বিক্রির ব্যবস্থাও নেই। ফলে বিনা ভাড়ায় যাত্রী যাতায়াত করছে, আর সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
প্ল্যাটফর্মে পা রাখলে মনে হয় যেন পরিত্যক্ত কোনো ভবনে ঢুকে পড়েছেন। সময়সূচির বোর্ড নেই, আগাছায় ঢেকে গেছে চারপাশ। ঝোপজঙ্গলের ফাঁকে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু মানুষ ট্রেনের শব্দ শোনার অপেক্ষায়- কে কখন বলে দেবে যে ট্রেন আসছে।
লোকাল ট্রেনগুলো রাজবাড়ী থেকে গোয়ালন্দ, পোড়াদহ, ভাঙ্গা ও ভাটিয়াপাড়া রুটে প্রতিদিন চলাচল করলেও, স্টেশন না থাকায় ও ক্রসিং সুবিধার অভাবে মাঝেমধ্যে এক-দুই ঘণ্টাও দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যাত্রীরা ক্ষুব্ধ, তবে নেই বিকল্প।
একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাসে গেলে ভাড়া বেশি পড়ে, তাই ট্রেনেই চলাফেরা করি। কিন্তু সময়মতো পৌঁছানো যায় না- প্রতিদিনই দেরি হয়।’
রাজবাড়ী রেলওয়ের জুনিয়র টিটিই ইন্সপেক্টর এনামুল হক বলেন, ‘এখানে জুনিয়র টিটিই থাকার কথা ১৮ জন, কিন্তু আছেন মাত্র ৪ জন। সঙ্গে আছেন ৩ জন সিনিয়র টিটিই। এই ৭ জন দিয়ে পুরো সেকশনের কাজ চালানো প্রায় অসম্ভব।’
এ প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে যাত্রীদের মনে। কবে ফিরবে পুরোনো দিনের মতো স্টেশনগুলোর কোলাহল? কবে আগাছা সরিয়ে ট্রেন থামবে নিয়মমাফিক, কবে যাত্রীরা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাবেন?