ঢাকা সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

ময়লা-আবর্জনার স্তূপে নাকাল রাজবাড়ীবাসী, বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৫, ০৪:৫৭ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজবাড়ীতে ভয়াবহ আকারে বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব। বিশেষ করে রাজবাড়ী পৌরসভা, গোয়ালন্দ, পাংশা ও বালিয়াকান্দি উপজেলার শহর এলাকায় মশার আধিক্য চরমে উঠেছে। মশার কামড়ে রাতে ঘুমাতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। শহরের অলিগলি, ড্রেন, খোলা ময়লার স্তূপ, জমে থাকা পানি ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এখন মশার প্রধান প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মশাবাহিত রোগ—যেমন: ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও ম্যালেরিয়া আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ভিড় লেগেই থাকে। অনেকের শরীরে ডেঙ্গুর উপসর্গও পাওয়া যাচ্ছে।

রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন পৌর এলাকায় ময়লা-আবর্জনা অপসারণের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশে ও খোলা স্থানে ময়লার স্তূপ জমে আছে। এসব জায়গা থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ এবং জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য মশা। পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব থাকলেও নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ ও ফগিং কার্যক্রম না হওয়ায় জনস্বাস্থ্যের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, মশার উপদ্রব এখন অসহ্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাতে ঠিকমতো ঘুমানো যায় না। পৌরসভা থেকে ওষুধ ছিটানোর কথা শোনা গেলেও তা কার্যকরভাবে হচ্ছে না। তারা দ্রুত মশা নিধন অভিযান শুরু ও শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দাবি জানান।

রাজবাড়ী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এখনই পৌরসভার উদ্যোগে ড্রেন পরিষ্কার, ময়লা-আবর্জনা অপসারণ ও নিয়মিত ফগিং কার্যক্রম শুরু না করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।

গোয়ালন্দ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফেরদৌস আলম খান জানান, প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কারণে শেষ ধাপের কাজ কিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। কাজ সম্পন্ন হলে গোয়ালন্দসহ পুরো জেলায় ময়লা-আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেমায়েত হোসেন বলেন, মশা নিধনে প্রশাসক নির্দেশ দিয়েছে। মেডিসিন ও ফগার মেশিন প্রস্তুত থাকলেও টেকনিশিয়ানের অভাবে কার্যক্রম কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই অভিযান শুরু হবে বলে তিনি জানান।

তবে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, মশা দমন শুধু ফগিং করলেই সম্ভব নয়; প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। নাগরিকদেরও নিজেদের বাড়িঘর ও আশপাশ পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি সরানো এবং পুরোনো টায়ার, বোতল, পাত্র ইত্যাদি যেখানে পানি জমে থাকে সেগুলো নিয়মিত ফেলে দেওয়া জরুরি।

রাজবাড়ী জেলায় ময়লা-আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় উদাসীনতা ও মশা নিধন কার্যক্রমের অচলাবস্থা এখন জনস্বাস্থ্যের বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত উদ্যোগ না নিলে ডেঙ্গু ও অন্যান্য মশাবাহিত রোগ আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।