ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৫

রাজশাহীতে আ.লীগ নেতার হিমাগারে কিশোরী ও নারীকে নির্যাতন

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ০৬:৪৮ পিএম
রাজশাহীতে আ.লীগ নেতার হিমাগারে কিশোরী, নারী ও তরুণকে নির্যাতনের পর সামনে হিমাগারের স্থানীয়রা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকারের হিমাগারে এক তরুণ, নারী ও কিশোরীকে ‘অমানবিক নির্যাতন’ করা হয়েছে। ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা অফিসকক্ষে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকায় সরকার কোল্ড স্টোরেজের অফিসকক্ষে আটকে রেখে তাদের নির্যাতন করা হয়।

এলাকাবাসী জানান, মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার জিকো (৪৫), মেয়ে আখি (৩৫) ও হাবিবা (৪০) তিন ভুক্তভোগীকে অফিসকক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এয়ারপোর্ট থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক করে। এর আগে পুলিশ আহত তিনজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠায়।

ভুক্তভোগীদের বাড়ি পবা উপজেলার কুঠিপাড়া গ্রামে। নির্যাতনের শিকার তরুণ (২৭) রাজশাহীর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। কিশোরী (১৩) ও নারী (৩০) তার খালাতো বোন। নির্যাতনের ঘটনায় ওই তরুণের ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে তিনজনকে লাঠি, বাঁশ ও হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তাদের শরীরে সেফটি পিন ফুটিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।

দুপুরে হিমাগারে বসে থাকার সময় দেখা যায়, নির্যাতনের শিকার নারী শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। তার কান দিয়ে রক্ত ঝরছিল। আহত মেডিকেল শিক্ষার্থীর দুই হাতে ও পিঠে জখমের চিহ্ন ছিল। কিশোরীর ঠোঁট ফেটে রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল।

নির্যাতনের শিকার তরুণ

নির্যাতনের শিকার নারী জানান, ‘জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু তার ছেলে-মেয়েরা বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। তাদের সন্দেহ, আমার সঙ্গে মোহাম্মদ আলীর অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তারা ফোন করে হিমাগারে আসতে বলে। তখন আমি খালাতো ভাই ও ছোট বোনকে নিয়ে যাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওখানে যাওয়ার পর আমাদের ধাক্কা দিতে দিতে অফিস কক্ষে ঢোকায়। পরে তাদের কর্মচারীদের সহায়তায় আমাদের মারধর করে। নির্যাতনের সময় কক্ষের দরজা বন্ধ করে রাখা হয় এবং আমাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।’

স্থানীয় লোকজন চিৎকার শুনে এগিয়ে যান। দরজা খুলতে বললেও ভিতর থেকে তা খোলা হচ্ছিল না। একপর্যায়ে দরজা খোলা হলে পুলিশ মোবাইল ফোনগুলো ফিরিয়ে দেয়।

নির্যাতনের শিকার কিশোরী জানায়, ‘মোহাম্মদ আলী সরকারের দুই মেয়ে আমাদের শরীরজুড়ে সেফটি পিন ফুটিয়ে নির্যাতন করেন।’

বেলা ১১টা থেকে ক্ষুব্ধ জনতা মোহাম্মদ আলীর ছেলে-মেয়েদের হিমাগারে অবরুদ্ধ করে রাখে। তারা গ্রেপ্তারের দাবি জানাতে থাকে। তবে বের করার সঙ্গে সঙ্গে হামলার আশঙ্কায় পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নিতে পারছিল না।

দুপুর ২টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা অফিস কক্ষের সিসিটিভি ক্যামেরা ও কাচের জানালাগুলো ভাঙচুর করে। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ তিনজনকে থানায় নিয়ে যায়।

এয়ারপোর্ট থানার ওসি ফারুক হোসেন বলেন, ‘তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’