ঢাকা রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

পুশ-ইন রোধে জনগণের সহায়তা চাইলেন বিজিবি মহাপরিচালক

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২৫, ০৫:১০ পিএম
‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’ উদ্বোধন শেষে কথা বলছেন বিজিবি ডিজি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। ছবি- সংগৃহীত

ভারতের পুশ-ইন প্রতিরোধে জনগণের সহযোগিতা চেয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। তিনি বলেছেন, সীমান্তে বসবাসরত স্থানীয় জনগণ এ বিষয়ে খেয়াল করে বিজিবির টহল দলকে খবর দিলে দ্রুত সেখানে গিয়ে প্রতিরোধ করা যাবে।

শনিবার (১৭ মে) সকালে বিজিবির রিভারাইন বর্ডার গার্ড (আরবিজি) কোম্পানির দায়িত্বপূর্ণ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন বাংলাদেশ-ভারত জল সীমান্তবর্তী রায়মঙ্গল নদী ও বয়েসিং খালের মুখে 'বয়েসিং ভাসমান বিওপি' উদ্বোধন করা শেষে এ কথা বলেন তিনি।

বিজিবির ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’ উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

'বয়েসিং ভাসমান বিওপি' উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘সিলেটের বিয়ানীবাজার, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ, কুড়িগ্রামের রৌমারীর প্রত্যন্ত চর এলাকা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জনবসতিহীন এলাকা দিয়ে পুশ-ইনের ঘটনা ঘটেছে। এটা প্রতিরোধ করার চেষ্টা চলছে।’

‘আজকে সকালেও কিছু পুশ-ইন হয়েছে। আমাদের সীমান্তটা এতো বিস্তৃত যে প্রতিটি জায়গায় গার্ড করা সম্ভব না। তারপরেও বিজিবি সদস্যরা যথাসাধ্য প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী সাধারণ জনগণ, আনসার ও পুলিশ সদস্যরাও পুশ-ইন রোধে বিজিবিকে সহায়তা করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি যদি কোনো বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে থেকে থাকে তবে নিয়ম মাফিকভাবে হস্তান্তর-গ্রহণের মাধ্যমে ফেরত প্রদান করা হয়। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি লেখা হয়েছে। বিজিবির পক্ষ থেকেও সার্বিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ফ্ল্যাগ মিটিং ও প্রতিবাদলিপি পাঠানো হচ্ছে।’       

‘সীমান্তে পুশ-ইন রোধে বিজিবির নিরাপত্তা জোরদার, টহল তৎপরতা ও জনবল বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি বিজিবিকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার’ আহ্বানও জানান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

এর আগে বিজিবির ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’ উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে ভাসমান বিওপিটি একটি পূর্ণাঙ্গ অপারেশনাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। যা জলপথে টহল ও নজরদারির সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষিত হলেও সুন্দরবনের বিস্তৃত জলাভূমি ও নদীবেষ্টিত সীমান্ত এলাকায় স্থলপথে নিয়মিত টহল প্রদান অনেকটাই কঠিন। এই ভাসমান বিওপি চোরাচালান, মানবপাচার, বনজ সম্পদ লুণ্ঠন এবং অন্যান্য সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর প্রতিক্রিয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে।’    

বাংলাদেশ-ভারতের ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ১৮০ কিলোমিটার নদীপথ। যার মধ্যে প্রায় ৭৯ কিলোমিটার সুন্দরবনের মধ্যে অবস্থিত। এর আগেও কাচিকাটা ও আঠারোভেকিতে দুটি ভাসমান বিওপি স্থাপন করা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় বয়েসিং-এ তৃতীয় ভাসমান বিওপিটি চালু হলো।

'বয়েসিং ভাসমান বিওপি'

সরকার মনে করে, ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’কেবল একটি স্থাপনা নয় বরং এটি একটি কৌশলগত নিরাপত্তা উদ্যোগ, যা সীমান্ত এলাকায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতির বাস্তব রূপ। এটি দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় একটি আধুনিক ও কার্যকর নিরাপত্তা সংস্কৃতি গঠনের পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

ভাসমান বিওপি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিজিবি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিজিবির যশোর রিজিয়ন কমান্ডার, খুলনা সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার, নীলডুমুর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, আরবিজি কোম্পানির অধিনায়ক, বিজিবির অন্যান্য পদবীর কর্মকর্তা ও সৈনিকরা উপস্থিত ছিলেন।