সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সম্প্রতি নির্মিত একটি সড়ক মাস পেরুতে না পেরুতেই প্রায় ৭০ শতাংশ ধসে পড়েছে। সড়কের গাইড ওয়াল ভেঙে গেছে এবং ৬০৭ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কের অন্তত ৬০ জায়গায় বড় ছোট গর্ত দেখা দিয়েছে। সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সড়ক নির্মাণে নিচ থেকে মাটি উত্তোলন, রোলার দিয়ে মাটি যথাযথভাবে চাপানো হয়নি, সাইড শোল্ডার নির্মাণ করা হয়নি এবং নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট এলজিইডি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কাজ করায় মাসের মধ্যে সড়কটি ভেঙে গেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে ‘সিরাজগঞ্জ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলার নরিনা ইউনিয়নের নারায়ণাদহ জামাত খানের বাড়ি থেকে শহীদ মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত এইচবিবি ৬০৭ মিটার কাজের অনুকূলে ৯৮ লাখ ৩৫ হাজার ৭৫০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার চুক্তি মূল্য ৯৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯৬২ টাকা। রাস্তাটি নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোহাম্মদ আলী এন্টারপ্রাইজ। তার থেকে কাজটি কিনে নেয় পান্না নামে এক ঠিকাদার।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, বন্ধ হয়ে গেছে রিকশা-ভ্যান চলাচল। শিডিউল মোতাবেক রাস্তাটি নির্মাণ না করায় ৬০৭ মিটার রাস্তায় ছোট-বড় প্রায় ৬০টি স্থান ধসে গেছে। রাস্তার শোল্ডারে প্রায় ২-৩ ফুট মাটি দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো মাটি দেওয়া হয়নি। রাস্তার পাশ থেকে মাটি তুলে ব্যবহার ও এজিং না থাকাসহ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ভেঙে গেছে রাস্তা এবং এর রক্ষা করার জন্য তৈরি গাইডওয়াল।
এ ব্যাপারে নরিনা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য আলমগীর হোসেনসহ স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল রশিদ, হয়রত আলী, ইয়াকুব আলী, শফিকুল রহমান মোল্লা ও ভ্যানচালক সাইদুল ইসলাম জানান, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ করায় কয়েক দফায় প্রতিবাদ করেও কোনো কাজ হয়নি। উল্টো এলজিইডি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি সংস্থা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং তারা জোরালোভাবে বলতে থাকে, কাজ করলেও বিল তুলব না করলেও বিল তুলব। অনিয়মের প্রতিবাদ করলে কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের লোকজন চাঁদাবাজির মামলা দেওয়ার হুমকি দেন।
তারা আরও জানান, ১ নম্বর ইটের পরিবর্তে ২ নম্বর ইট ব্যবহারসহ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে দায়সারাভাবে কোনো রকমে কাজটি শেষ করেন। এখনো প্রায় ২৫০ মিটার গাইডওয়ালের কাজ করা হয়নি, যেটুকু করেছে তাও অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে। সড়কের দুই পাশে (শোল্ডারে) ২ ফুট মাটি ধরা থাকলেও সেখানে ১ ফুটও মাটি দেওয়া হয়নি। সড়কে বালু-মাটি দিয়ে ভরাটের পর সড়কটি মজবুত করতে রোলার দিয়ে পেটানোর নিয়ম রয়েছে, কিন্তু তা না করেই ওই ঠিকাদারি সংস্থা নিয়মের তোয়াক্কা না করে সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করতে থাকে। তাই একদিকে কাজ শেষ করে অপরদিকে ভাঙতে থাকে।
অপরদিকে ওই প্রকল্পের একাধিক তদারকি কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকায়, কেউ এ ব্যাপারে কোনো প্রকার বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
এদিকে ওই প্রকল্পের দরপত্র অনুযায়ী ডিজাইন ও বিস্তারিত নির্দেশিকা অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন ও সন্তোষজনক ল্যাব টেস্ট রিপোর্ট ছাড়া বিল পরিশোধের নিয়ম থাকলেও তা তোয়াক্কা করেন না উপজেলা প্রকৌশলী এ.এইচ.এম. কামরুল হাসান রনী।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী এ.এইচ.এম. কামরুল হাসান রনী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দরপত্র অনুযায়ী কাজ বুঝে নিব। রাস্তা ঠিক করতে যা করার তা ঠিকাদারকে করতে হবে। দরপত্রের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। নিম্নমানের সামগ্রী ও সাইড শোল্ডারের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।