ঢাকা শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫

সিরাজগঞ্জে তিন মাস পর প্রতিবন্ধী হত্যার রহস্য উদঘাটন

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৫, ০১:১৬ পিএম
প্রতিবন্ধী যুবক হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৬। ছবি: সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ

মোবাইলের খুদে বার্তা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার ৩ মাস পর এক প্রতিবন্ধী যুবক হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর আপন বোনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (০২ অক্টোবর) বিকেলে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ভুক্তভোগীর আপন বোন রেশমা খাতুন (২৫), প্রতিবেশী ভাবি হাবিজা খাতুন (৪২), ভদ্রঘাট এসিআই মিলের নিরাপত্তাপ্রহরী গোলাম মোস্তফা (৫৫), সুমন চন্দ্র ভৌমিক (২৮), তপু সরকার (১৯) ও শফিকুল ইসলাম (৪০)।

নিহত মানসিক প্রতিবন্ধী শামীম ইসলাম (২৮) সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার কুটিরচর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে।

সিরাজগঞ্জ ডিবির ওসি একরামুল হোসাইন বলেন, প্রতিবন্ধী শামীম ইসলাম গত ২ জুলাই গোসল করার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। দুদিন পর ৪ জুলাই ভদ্রঘাট এলাকায় অবস্থিত এসিআই মিলের অভ্যন্তরে অবস্থিত কচুরিপানাযুক্ত পুকুরের কিনারা থেকে শামীমের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের বাবা অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর ডিবি পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করে।

ভুক্তভোগী মোবাইল ব্যবহার না করায় এবং ঘটনাস্থলের আশপাশে সিসি ক্যামেরা না থাকায় তদন্তে বেগ পেতে হয়।

এরপর আরও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ঘটনার আড়াই মাস পর এক আসামির বান্ধবীকে দেওয়া খুদে বার্তা থেকে হত্যাকাণ্ডের ক্লু পায় তদন্ত কর্মকর্তা।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিজ বাড়ি থেকে ভদ্রঘাট এসিআই মিলের নিরাপত্তাপ্রহরী গোলাম মোস্তফা, সুমন চন্দ্র ভৌমিক, তপু সরকার ও শফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ১ অক্টোবর নিজ বাড়ি থেকে ভুক্তভোগীর আপন বোন রেশমা খাতুন ও প্রতিবেশী ভাবি হাবিজা খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওসি বলেন, গ্রেপ্তারের পর আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানান, ভুক্তভোগীর বোন রেশমা এসিআই মিলে চাকরি করার পাশাপাশি নিজ বাড়িতে দেহ ব্যবসা করতেন। রাতে এসিআই মিলের নিরাপত্তা প্রহরী ও স্থানীয় লোকজন তার বাড়িতে যাতায়াত করতেন।

একদিন রাতে শামীম তার বোনকে নিজ ঘরে এক নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক কাজ করতে দেখে ফেলে, যে কারণে উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্য ও দ্বন্দ্ব শুরু হয়। একপর্যায়ে আপন বোন ও প্রহরীরা মিলে শামীমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। 

এ অবস্থায় ঘটনার রাতে চুরি করতে এসিআই মিলে প্রবেশ করেন শামীম। তখন মিলের কয়েকজন প্রহরী মিলে শামীমকে ধরে প্রতিবেশী ভাবি হাবিজার বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে শামীমের বোন রেশমাকে ডেকে আনা হয়। ওই বাড়িতেই প্রহরীরা শামীমকে ছুরিকাঘাত করে এবং আপন বোন রেশমা প্রতিবন্ধী শামীমের শরীরে এডিস ঢেলে দিয়ে হত্যা করে। এরপর মিলের অভ্যন্তরে অবস্থিত কচুরিপানাযুক্ত পুকুরের কিনারায় শামীমের মরদেহ ফেলে রাখা হয়।

ওসি আরও বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে এসিআই মিলের নিরাপত্তাপ্রহরী গোলাম মোস্তফা, সুমন চন্দ্র ভৌমিক ও তপু সরকার দোষ স্বীকার করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আইভীন আক্তার তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আর ভুক্তভোগীর বোন রেশমা খাতুন ১ অক্টোবর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম শাহরিয়ার শহিদ বাপ্পির কাছে জবানবন্দি দেন। গ্রেপ্তাররা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।