বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার শিকার হলেন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার এক স্কুলছাত্রী। চার দিন আগে সকালে সহপাঠীর সঙ্গে বের হন। পরে পরিত্যক্ত একটি ইটভাটায় পাঁচজন যুবক ওই স্কুলছাত্রীর ওপর নির্মম নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ওই পাঁচ যুবক প্রথমে গোপনে ছবি তুলে তা ভাইরাল করার ভয় দেখান। তারপর ওই মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তাদের তিনজন। আর বাকি দুজন সহযোগিতা করে।
পুলিশ বলছে, ভিকটিম স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সহপাঠী বন্ধু রাফির সঙ্গে সে শাহগলী বাজারের পাশের একটি পরিত্যক্ত ইটভাটায় গেলে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা যুবকরা গোপনে ছবি তোলে। এরপর তারা ভয় দেখিয়ে মেয়েটিকে ইটভাটার ভেতরে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার সকালে। তবে বিষয়টি চেপে রাখতে ভুক্তভোগীর পরিবারকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশেষে মঙ্গলবার রাতে ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ রাতেই ভিকটিমকে তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়।
পরদিন বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে ভিকটিম নিজেই পাঁচ যুবকের নাম উল্লেখ করে জকিগঞ্জ থানায় মামলা করেন। আসামিরা সবাই একই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।
মামলায় বারহাল ইউনিয়নের পাঁচ যুবককে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন নিদনপুর গ্রামের খছরুজ্জামানের ছেলে ইমরান আহমদ (২৩), খিলগ্রামের আব্দুল বাছিতের ছেলে তানজিদ আহমদ (১৮), মাইজগ্রামের আজাদ আহমেদের ছেলে শাকের আহমদ (২৪), একই গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে শাকিল আহমদ (২১) ও মনতৈল গ্রামের ফইজ আলীর ছেলে মুমিন আহমদ (২০)।
জকিগঞ্জ থানার ওসি জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে জানতে পারি। এরপর তাৎক্ষণিক ভিকটিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। বুধবার সকালে মামলা হওয়ার পর থেকেই আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আসামিরা আত্মগোপনে চলে গেছে। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বুধবার বিকেলে বারহাল এলাকায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় জনতা। বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। বক্তারা এই বর্বর ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ আহমদ বলেন, ‘স্কুলের ছাত্রীর সঙ্গে এমন ঘটনা শুধু একটি পরিবার নয়, পুরো সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে।’
আরেক অভিভাবক হাফিজা খাতুন বলেন, ‘আমরা কীভাবে মেয়েদের স্কুলে পাঠাব? প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে কঠোর বিচার নিশ্চিত করা। এরা সমাজের কলঙ্ক। পুলিশকে কঠোর হতে হবে।’
ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে বারহাল এলাকায় স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। বক্তারা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
আপনার মতামত লিখুন :