সিলেটের আলোচিত রায়হান আহমেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি বরখাস্ত হওয়া পুলিশের এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গ্রেপ্তারের প্রায় ৫৭ মাস পর উচ্চ আদালতের জামিন মঞ্জুরের পর রোববার (১০ আগস্ট) নিম্ন আদালত থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পরে নথি কারাগারে পৌঁছালে বিকেলেই সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে তিনি মুক্তি পান।
তবে আকবরের জামিনের সঠিক তারিখ জানা যায়নি। মামলার চার্জশিটভুক্ত ছয় আসামির মধ্যে চার জন এখন জামিনে মুক্ত। অপর দুই আসামির মধ্যে এএসআই আশেক এলাহী কারাগারে আছেন এবং সংবাদকর্মী আব্দুল্লাহ আল নোমান ফ্রান্সে পলাতক।
এদিকে জামিন পাওয়া আসামিদের মধ্যে এসআই হাসান আলী ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন এবং তিনি বর্তমানে পলাতক।
প্রধান আসামির জামিনের খবরে ভেঙে পড়েছেন রায়হান আহমেদের মা সালমা বেগম। সোমবার (১১ আগস্ট) তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি ব্যর্থ মা। কিছু করতে পারলাম না। অথচ ছেলে খুনের সুষ্ঠু বিচারের অপেক্ষায় ছিলাম।’
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আসামিরা জামিনে বের হয়ে পালিয়ে যাবে। নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে হচ্ছে। আমার মতো অনেক মা আছেন, যারা এমন বিচারের অপেক্ষায়।’
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর রাতে সিলেট নগরীর আখালিয়ার নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রায়হান আহমেদকে (৩৪) কাস্টঘর এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আটকে তাকে নির্যাতন করা হয়। পরদিন সকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
প্রথমে পুলিশ দাবি করে, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে রায়হান মারা গেছেন। কিন্তু পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে বেরিয়ে আসে মূল ঘটনা। সে সময় সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। এরপর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ চার জনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন জনকে প্রত্যাহার করা হয়। ঘটনার পর ফাঁড়ির সামনের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করে ফেলা হয়।
পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করে। তদন্ত চলাকালীন এসআই আকবর ভারতে পালিয়ে যান। ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাটের দনা সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০২১ সালের ৫ মে পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এতে এসআই আকবরসহ এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুন অর রশিদ, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস, এসআই হাসান উদ্দিন ও গণমাধ্যমকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমানকে অভিযুক্ত করা হয়। একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার বিচার শুরু হয়। বাদী তাহিমনা আক্তার তান্নি ১১ মে প্রথম সাক্ষ্য দেন। ইতোমধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন