টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নদী, খাল-বিল জুড়ে নির্বিচারে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ চায়না জাল। এতে ধ্বংস হচ্ছে মাছসহ নানা প্রজাতির জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ।
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পাশাপাশি হাঁস পালন ও প্রাকৃতিক খাদ্যশৃঙ্খলও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সৌরভ কুমার দে জানান, সম্প্রতি একাধিক অভিযানে শতাধিক চায়না জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যেখানেই অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনামুই গ্রামের গৃহিণী জুলেখা বেগম বলেন, হাঁস পালন করেই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতাম। আগে বিল থেকে হাঁসের খাবার হিসেবে প্রচুর শামুক পাওয়া যেত। কিন্তু গত দুই বছর ধরে চায়না জালের কারণে শামুক প্রায় নেই বললেই চলে। এতে আমি ও আশপাশের প্রায় ২৫টি পরিবার হাঁসের খাবার সংকটে পড়েছি।
কাহেতা গ্রামের জহুরা বেগম বলেন, কারেন্ট জালের বদলে চায়না জাল ব্যবহারের পর থেকেই দেশি মাছ কমে গেছে। এখন তো হাঁস পর্যন্ত এই জালে আটকে মারা যাচ্ছে।
স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য বিপ্লব কুমার জানান, আগে খাল-বিলে কুঁচিয়া ধরে বিক্রি করেই সংসার চলত। কিন্তু এখন প্রায় কোথাও কুঁচিয়া নেই। বর্ষাকালে মা মাছ ও পোনা ধরার সময় কুঁচিয়াও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
সোনামুই গ্রামের শিমুল পারভেজ বলেন, আমাদের গ্রামসহ আশপাশের ছয়-সাতটি গ্রামে শত শত পরিবার হাঁস পালন করে সংসার চালায়। কিন্তু এখন চায়না জালের ফাঁদে শুধু মাছ নয়, হাঁসও মারা যাচ্ছে। এতে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
ফলদা শরীফুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার দত্ত বলেন, চায়না জাল শুধু দেশি মাছই শেষ করছে না; জলজ প্রাণী, হাঁস খামার ও জীববৈচিত্র্যকেও ধ্বংস করছে। এমনকি খাদ্যসংকটের কারণে অতিথি পাখির আগমনও কমে গেছে।
ঝাওয়াইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান তালুকদার বলেন, নিষিদ্ধ চায়না জালের ব্যবহার বন্ধে আমরা সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছি। তবে টেকসই সমাধানের জন্য প্রশাসন ও জনগণের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন।
স্থানীয়দের দাবি, নিষিদ্ধ চায়না জালের অবাধ ব্যবহার বন্ধে প্রশাসনের আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তা না হলে গোপালপুরের জলজ সম্পদ, হাঁস খামার ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।