ঢাকা শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫

‘মৎস্যশূন্য’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মৎস্য অভয়াশ্রম

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ০৫:২৫ পিএম
মৎস্য অভয়াশ্রমে মাছ নেই, ফিরে যাচ্ছেন সৌখিন জেলেরা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘোষিত মৎস্য অভয়াশ্রম বুড়ির বাঁধে ৩ জেলা হতে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে মাছ ধরা উৎসবে যোগ দিয়ে মাছ না পেয়ে বিফল মনোরথে ফিরে গেছেন মৎস্য শিকারীরা। এতে অনেকের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও শুক্রবার হয়েছে বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম বুড়ির বাঁধে জলকপাট খুলে দিয়ে উন্মুক্ত মৎস্য শিকারের উদ্বোধন করেন।

ঠাকুরগাঁও শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে বুড়ির বাঁধে মাছ ধরা উৎসবে মেতেছেন শত শত উৎসুক মানুষ। অনেকে শুধু দেখতে ও মাছ ক্রয় করতে গিয়েছেন সেখানে। তবে অন্যান্য বারের তুলনায় এবার মাছ পাওয়া যাচ্ছে না তেমন। দীর্ঘ পরিশ্রম করেও মাছ না পেয়ে অনেকে ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে।

শুক নদীর তীরে সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা ইউনিয়নের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত বুড়ি বাঁধটি। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলাম বাঁধের গেট খুলে দিয়ে মাছ ধরা উৎসবের উদ্বোধন করেন।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে দেখা যায়, জাল, পলো আর মাছ রাখার পাত্র খলই নিয়ে ভোর থেকেই বাঁধ এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন শত শত মানুষ। কেউ ভেলায়, কেউ ছোট নৌকায় করে মাছ ধরছেন। এ যেন মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। আর বাঁধে দাঁড়িয়ে তাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা।

মাছ ধরার জন্য আশপাশের কয়েক গ্রামের ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ যেন ভেঙে পড়েছে নদীর তীরে। কেবল পুরুষরাই নয়, নারী-শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। কারও হাতে খেওয়া জাল, কারও হাতে লাফি জাল, কারও হাতে পলো। অনেকেই কোনও সরঞ্জাম ছাড়া খালি হাতেই নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। এতে লোকে লোকারণ্য হয় এলাকাটি।

তবে মাছ ধরতে আসা সকলেরই অভিযোগ, মাছ না পাওয়ার। রাত থেকে জাল ফেলেও কাঙ্ক্ষিত মাছ পাচ্ছেন না কেউই। দেশীয় প্রজাতির মাছ এক প্রকার বিলুপ্তির পথে। গত কয়েক বছর আগেও এই বাঁধে প্রচুর দেশীয় মাছ ধরা পড়ত। কিন্তু এখন মাছ নেই। মৌসুমের শুরুতে স্থানীয়রা কারেন্ট জাল, রিং জাল ব্যবহার করে মাছ ধরায় দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে মনে করেন অনেকে।

অপরদিকে শহর থেকে দেশীয় মাছ ক্রয় করতে যাওয়া ক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, এখানে শহরের তুলনায় মাছের দাম অনেক বেশি। দেশীয় মাছ তেমন পাওয়া যায় না এখানে। যাও পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু দাম অনেক। পুটি মাছ যেখানে বাজারে দাম দুইশ টাকা এখানে চাওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। তাই অনেক ক্রেতাই মাছ ক্রয় করতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

মাছ ধরা উৎসবকে ঘিরে বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় বসেছে খাবারের হোটেল, ফলের দোকান, খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান। বাইরে থেকে আসা মানুষের মোটরসাইকেল ও সাইকেল রাখার জন্য তৈরি হয়েছে অস্থায়ী গ্যারেজও।

জানা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালের দিকে খরা মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য এলাকায় একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতি বছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা অবমুক্ত হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম যাকারিয়া জানান, ১৯৫১-৫২ সালের দিকে বুড়ি বাঁধ সেচ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। বাঁধটির সামনে একটি অভয়াশ্রম আছে। প্রতিবছর বাঁধটি ছেড়ে দেওয়ার পরে মাছ ধরার জন্য এখানে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। আমরা মনে করছি এটার মাধ্যমে আমিষের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ হবে।