রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২৫, ১০:৩১ পিএম

কোরিয়ার সাংস্কৃতিক লড়াই বিশ্বে একটা বিরাট ঘটনা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২৫, ১০:৩১ পিএম

কোরিয়ার সাংস্কৃতিক লড়াই বিশ্বে একটা বিরাট ঘটনা

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বে এমন একজন লেখকও নেই যারা দুটি ভাষায় লিখে সমান খ্যাতি পেয়েছেন। যারা দুটি ভাষায় লিখতে পারতেন তাদেরও শেষপর্যন্ত একটি ভাষার ওপরই আশ্রয় করতে হয়েছে। আমাদের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ফরাসি ভাষায়ও লিখেছেন, কিন্তু টিকে আছে তার বাংলাভাষার লেখাগুলোই। বাঙালি জাতি মূলত একভাষিক। কথাগুলো বলছিলেন- বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং অনুবাদক অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস।

তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বাধীনতার এত বছর পরও কোনো ভাষানীতি নেই। এটা আরও অনেক আগেই হওয়া দরকার ছিল। একটা দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য সমন্বিত একটা ভাষানীতি থাকাটা খুব জরুরি। আমরা এখনো একটা বহুভাষী জনগোষ্ঠী তৈরি করতে পারিনি। আমাদের কয়েক প্রজন্ম হয়তো লাগবে তা তৈরি করতে। দেরি হয়ে গেলেও তা আমাদের শুরু করতে হবে।

শুক্রবার (১৬ মে) বিকেলে ঢাকার পরিবাগে উজান প্রকাশনের আয়োজনে ‘কোরিয়ান সাহিত্য সন্ধ্যায়’ তিনি এসব কথা বলেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান এলটিআই কোরিয়ার সহযোগিতায় উজান প্রকাশনের এই আয়োজনে কোরিয়ার সাংস্কৃতিক লড়াই ও বৈশ্বিক অনুভব নিয়ে আলোচনায় প্রত্নতাত্ত্বিক অধ্যাপক মাসউদ ইমরান মান্নু বলেন, কোরিয়ার সাংস্কৃতিক লড়াই সারা বিশ্বের কাছে এখন একটা বিরাট ঘটনা। তাদের এই লড়াই থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার আছে।

তিনি  আরও বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সাহিত্য থেকে গ্রহণ করছে তাদের চলচ্চিত্র, কোরিয়ার চলচ্চিত্র থেকে তাদের সাদের ওয়েবটুন ও এনিমেশন। তাদের সংস্কৃতি ও সাহিত্যের নানাকিছুর মধ্যে একটা সমন্বয় আছে। এই সমন্বয়টা আমাদের সাহিত্য, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, নাটক, এসবের মধ্যে নেই।

এ সময় তিনি আরও বলেন, কোরিয়ার ওয়েবটুন ও এনিমেশন আমরা যেটা পছন্দ করি সেটাকে ভিন্নভাবে উপস্থান করছে। তাদের জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক পণ্যের ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। তাদের হিরোরা হলিউড বলিউডের হিরোদের মতো পেশীবহুল নয়। সামান্য ও সাধারণ মানুষের মধ্য থেকেই তাদের বেছে নেওয়া, কিন্তু তারা অসামান্য উপস্থাপনায়। কে-পপের মতো জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক পণ্যে উপস্থাপিত তাদের মেয়েলি চরিত্রগুলোও এক একটা বিকল্প আখ্যানের মুখপাত্র।

আয়োজনে কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক কুমার চক্রবর্তী কোরিয়ার সাম্প্রতিক সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কোরিয়ার কবি কিম সওল এবং কো উন, কথাসাহিত্যিক জঙ ছান ও হান কাংসহ অনেকের সাহিত্যিক বিশিষ্টতা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, শুধু অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি বড় কথা নয়। কোনো দেশের স্থায়ী প্রভাব তৈরি হয় সাহিত্য, সঙ্গীত, চলচ্চিত্রসহ নানা সাংস্কৃতিক উপাদানের কোমল শক্তি বা সফট পাওয়ারের বলে।

আয়োজনে কোরিয়ার সাহিত্যের ইতিহাস তুলে ধরেন কবি ও প্রাবন্ধিক চঞ্চল আশরাফ এবং গৌরাঙ্গ মোহান্ত।

চঞ্চল আশরাফ কোরিয়ান সাহিত্যের ইতিহাস থেকে উদাহরণ দিয়ে বলেন, কোরিয়া তার অতীত, তার নিপীড়ন ও নির্যাতন থেকে, তার গৃহযুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়েছে এবং সেসব উপাদানকে একটা স্থায়িত্ব দিয়ে জনমনস্তত্বের কাছে একটি আবেদন জাগিয়ে রেখেছে। যেকোনো দেশের জন্য এ কাজটা খুব জরুরি।

কবি ও প্রাবন্ধিক গৌরাঙ্গ মোহান্ত বলেন, বৃদ্ধিজম এবং চীন ও জাপানের দর্শন দিয়ে কোরিয়ার শুরুর দিকের সাহিত্য প্রভাবিত হয়েছে, কিন্তু আধুনিক কোরিয়ার সাহিত্য আত্মীকরণ করেছে পাশ্চাত্য বস্তুবাদ ও রূপকবাদ। বাংলাসাহিত্য বিকাশে যেমন চর্যাপদ তেমনই কোরীয় সাহিত্যের শুরুতে আছে বুদ্ধিজম। আধুনিকতায় এসে তারা সেসব উপাদানকে মানবতাবাদী সম্পদে রূপান্তরিত করেছে।

আলোচনায় বাংলায় কোরিয়ান সাহিত্যের যেসব অনুবাদ হয়েছে সেগুলোর ওপর আলোকপাত করেন কবি ও চিত্রকর শামসেত তাবরেজী।

তিনি বলেন, অনুবাদ নিজেই সাহিত্য। সাহিত্যের মধ্যে থাকলে হলে নিজের ভাষা ঠিকমতো জানতে হবে। তারপর অন্য একটি ভাষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের একাডেমি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমাদের সাম্প্রতিক সাহিত্য ও সমকালীন লেখকদের উপেক্ষা করা হয়। আমাদের এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে আলোচনা ও চিন্তার পরিসর বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখতে গিয়ে উজান প্রকাশন কোরিয়ার সাহিত্যের যেসব বই বাংলায় অনুবাদ করেছে সেগুলোর বিষয়ে তুলেন ধরেন লেখক ও সাংবাদিক ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ।

তিনি বলেন, উজান প্রকাশন কোরিয়ার সাহিত্যের আটটি বই প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে গল্প, কবিতা ও উপন্যাস যেমন আছে, তেমনি আছে কোরিয়ার কে-পপ নিয়ে বইও। এই বইগুলো নিয়ে আজকের আয়োজনে আছে একটি প্রদর্শনীও।

কোরিয়ার সাহিত্য সন্ধ্যার এই আয়োজন শুরু হয় কবিতা আবৃত্তি দিয়ে। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে কোরিয়ার বিভিন্ন কবির কবিতা আবৃত্তি করেন বিজন গুহ এবং উম্মে হাবীবা। কথাসাহিত্য থেকে পাঠ করেন হালিমা নূর পাপন। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংস্কৃতিকর্মী ডাক্তার শাহনাজ পারভীন। আয়োজনের সবশেষে উপস্থাপন করা হয় একটি প্রামাণ্যচিত্র। দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক, কবি, সাংবাদিক এবং সাধারণ পাঠক ও শিক্ষার্থীরা প্রামাণ্যচিত্রে কোরিয়ার সাহিত্য পাঠের অভিজ্ঞতা তুলেন ধরেন এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।

Link copied!