আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, দ্রোহ, প্রেম ও চেতনার কবি এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের এই দিনে অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
সাম্য, সম্প্রীতি আর মানবতার জয়গান ছিল যার প্রতিটি লেখায়, সেই মহান কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে হবে নানা আয়োজন।
একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ ও দার্শনিক হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামের পরিচিতি থাকলেও তিনি মূলত কবি হিসাবেই সবচেয়ে বেশি সুপরিচিত।
‘দুখু মিয়া’ নামে পরিচিত এই কবি অত্যন্ত অল্প বয়সেই বাবাকে হারান এবং পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে তার শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয়। মাত্র দশ বছর বয়সে জীবিকা অর্জনের জন্য তাকে কাজে নামতে হয়।
গ্রামের স্থানীয় মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করা থেকে শুরু করে মক্তবে শিক্ষকতা, বাসুদেবের কবিদলে যোগদান, রেলওয়ে গার্ডের খানসামা এবং সবশেষে চা-রুটির দোকানে রুটি বানানোর কাজও করেছেন তিনি।
বিদ্রোহী কবির উত্থান
১৯১৭ সালের শেষদিকে তিনি সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসাবে যোগ দেন। ১৯২১ সালের ডিসেম্বরে কুমিল্লা থেকে কলকাতা ফেরার পথে তিনি সৃষ্টি করেন দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্ম – ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও ‘ভাঙার গান’ সংগীত।
একই সময়ে তিনি লিখেন বিখ্যাত কবিতা ‘কামাল পাশা’। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত কবিতা-সংকলন ‘অগ্নিবীণা’। নিজের লেখনীর মধ্য দিয়ে তিনি অসাম্প্রদায়িকতা, সাম্য, সম্প্রীতি ও মানবতার জয়গান গেয়েছেন।
বাংলাদেশে জাতীয় কবি নজরুল
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে তৎকালীন সরকার কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে।
১৯৭৬ সালে তৎকালীন সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে এবং একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি) হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাঙালির চেতনার কবি নজরুল। তার ইচ্ছানুযায়ী ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন গোর থেকে মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই’ – এই গানের কথা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
জন্মবার্ষিকী উদযাপন
কবির জন্মদিন উদযাপনে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে থাকছে নানা আয়োজন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জাতীয় পর্যায়ে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যা শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় কুমিল্লা ও ঢাকাসহ দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান : কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’। আজ বিকাল ৩টায় কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এই আয়োজনে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
অনুষ্ঠানে ‘নজরুল পুরস্কার ২০২৩ ও ২০২৪’-এর জন্য মনোনীতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
এছাড়াও, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিককর্মী সংঘ এবং ছায়ানট নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন করবে।
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে আজ থেকে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসব, যেখানে থাকছে একক ও সম্মিলিত গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন