খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করেছে দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক এবি ব্যাংক পিএলসি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২১ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছে মাত্র ৫ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনে গুরুতর কারসাজির এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জেনেও আরো একাধিক ব্যাংক এমন তথ্য গোপন করেছে। আর একাজে সহায়তা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু লোক বলে অভিযোগ রয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকটি গত বছরের আর্থিক বিবরণীতে খেলাপি ঋণের যে পরিমাণ দেখিয়েছে, তা প্রকৃত খেলাপির চেয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা কম। এর মধ্য দিয়ে বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ গোপন করেছে ব্যাংকটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ডিসেম্বর শেষে এবি ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের মোট পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। তার মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২১ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট ঋণের ৬৭ দশমিক ১১ শতাংশই খেলাপির খাতায় চলে গেছে। কিন্তু এবি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংককে যে আর্থিক বিবরণী দিয়েছে, তাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেখানো হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ২৭২ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সে হিসাবে এবি ব্যাংক খেলাপি ঋণ কম দেখিয়েছে ১৬ হাজার ১০ কোটি টাকা।
খেলাপির বিষয়ে জানতে চাইলে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আফজাল বলেন, আমাদের মন্দ ঋণ রয়েছে। ঋণ আদায়ে চেষ্টা চলছে। তবে এটি ৬৭ শতাংশ তা ঠিক না। নিজেদের লোক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্বারা যাচাই করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভালোভাবে অডিট করেছে। এত বড় হিসাবের গরমিল হওয়ার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে কোথাও বড় একটা ভুল হচ্ছে। আর পালাবদলে ঋণ আদায় হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এবি ব্যাংকের ৩১ হাজার ৭১২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড (গুণগত ভালো মানের) ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ১৫ শতাংশ। কিন্তু এবি ব্যাংকের দেখানো হিসাবে স্ট্যান্ডার্ড ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার ৭১৬ কোটি বা ৮১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। সে হিসাবে ব্যাংকটি স্ট্যান্ডার্ড ঋণ বেশি দেখিয়েছে ১৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনে গুরুতর কারসাজির এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
একইভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক দেখিয়েছে, এবি ব্যাংকের এসএমএ (অনাদায়ি কিন্তু খেলাপি দেখানো হয়নি) ক্যাটাগরিতে ঋণের পরিমাণ ১২৭ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ। যদিও ব্যাংকটির দেওয়া হিসাবে এসএমএ ঋণ ৬১৭ কোটি বা ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ দেখানো হয়। এ ক্ষেত্রেও ব্যবধান ৪৯০ কোটির।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন