বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৫, ১০:৩৭ এএম

নাসা গ্রুপের নজরুলের নজিরবিহীন জালিয়াতি

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৫, ১০:৩৭ এএম

নাসা গ্রুপের নজরুলের নজিরবিহীন জালিয়াতি

ছবি: সংগৃহীত

ঋণের টাকা বিদেশে পাচারসহ ব্যাংক খাতে নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদারের নজিরবিহীন জালিয়াতির তথ্য পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত গ্রুপটির ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খেলাপি ১১ হাজার কোটি টাকা। ২৭টি ব্যাংক ও ১টি ফাইন্যান্স কোম্পানি থেকে এসব ঋণ নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় সব নির্দেশ উপেক্ষা করা হয়েছে। কার্যত ঋণের নামে ব্যাংকগুলোতে লুটপাট চালানো হয়েছে। ঋণের টাকাই পাচার করা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানির আড়ালে এবং হুন্ডির মাধ্যমেও পাচার করা হয়েছে অর্থ।

পাচারের টাকা চার দেশে ১৮টি সেল কোম্পানিতে (মালিকানা গোপন করে বেনামি কোম্পানি) বিনিয়োগ করা হয়েছে। বিদেশে হাউজিং, গার্মেন্ট ও ট্রেডিং ব্যবসা আছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের কেনসিংটনে বিলাসবহুল দুটি বাড়ি কেনা হয়। এখন পর্যন্ত বিদেশে তার প্রায় ৬৭০ কোটি টাকার সম্পদ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সব মিলে ২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ আটক করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

নাসা গ্রুপের জাল-জালিয়াতি উদঘাটন করতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), সিআইডি তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে ওই সব সংস্থার তদন্তের ভিত্তিতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন পাচার টাকা উদ্ধারের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিএফআইইউ নাসা গ্রুপ ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৪৫টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। বেআইনিভাবে ৭৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি গ্রুপটি। ফলে এগুলোর বিষয়ে তদন্ত চলছে। এছাড়া গ্রুপের স্বনামে আরও কিছু ব্যাংক হিসাবে ৫২১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, দেশের ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবে ৩ হাজার ৮১ ডলার বা ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও ৬ হাজার ৬৪০ পাউন্ড বা ১০ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়,  যুক্তরাজ্য, হংকং, আইল অব ম্যান ও জার্সিতে বিপুল সম্পদ ও বিনিয়োগ রয়েছে নাসা গ্রুপের । একইসাথে ওইসব দেশে মোট ১৮টি শেল কোম্পানি শনাক্ত করা হয়েছে। এসব কোম্পানির মাধ্যমে আমদানি, রপ্তানি, হাউজিং ও ট্রেডিং ব্যবসা পরিচালিত করা হচ্ছে। কোম্পানিগুলোতে স্থানীয় উৎস থেকে বিনিয়োগের জোগান দেওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, দেশ থেকে পাচার করা টাকা দিয়েই ওইসব কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্য, আইল অব ম্যান ও জার্সিতে ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড ৭টি সম্পত্তি চিহ্নিত করা হয়েছে। বিদেশি একটি ব্যাংকের হিসাবে ২ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ডের স্থিতি পাওয়া গেছে। ব্যাংক হিসাবে থাকা অর্থের লেনদেন স্থগিত করতে সংশ্লিষ্ট দেশের মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। এসব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বিদেশে প্রায় ৬৭০ কোটি টাকার সম্পদ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে নাসা গ্রুপের ২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ আটক করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের কেনসিংটনে বিলাসবহুল দুটি বাড়ি কেনেন নজরুল ইসলাম। ওই বাড়ি কেনা বাবদ ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড তিনি পরিশোধ করেছিলেন। রপ্তানি আয় দেশে না এনে ওইসব অর্থ বিদেশে নগদায়ন করে তিনি ওই লেনদেন করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া লন্ডনে বেনামে নাসা গ্রুপের নামে হাউজিং ব্যবসা পরিচালনার তথ্যও মিলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে দেখা যায়, নাসা গ্রুপের রপ্তানি আয়ের অর্থ যেমন দেশে আসেনি, তেমনি আমদানির দায় পরিশোধ করা হলেও পণ্যও দেশে আসেনি। ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে কাঁচামাল আমদানি করা হলেও তার বিপরীতে কোনো পণ্য রপ্তানি করা হয়নি। ফলে এলসির দায় ব্যাংক ফোর্সলোন সৃষ্টি করে পরিশোধ করেছে। নাসা গ্রুপের মোট ঋণের মধ্যে ফোর্সলোনে রয়েছে প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা।

নাসা গ্রুপকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-কানুন মানেনি ব্যাংকগুলো। সীমার চেয়ে বেশি ঋণ দিতে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো অনুমোদন ছাড়াই ৯টি ব্যাংক নাসা গ্রুপকে সীমার চেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে। ঋণের বিপরীতে নাসা গ্রুপ যথেষ্ট জামানত যেমন দেয়নি, তেমনি দেয়নি করপোরেট গ্যারান্টিও। এছাড়া ঋণের বড় বড় অংশ বেনামি হওয়ায় এর বিপরীতে ব্যাংকও নেয়নি কোনো গ্যারান্টি।

প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত নাসা গ্রুপের মোট ঋণের স্থিতি ছিল ৩৭০০ কোটি টাকা। তবে গ্রুপের নামে বেনামি ঋণ আগে থেকেই ছিল। ২০১৬ সালে ইসলামী ব্যাংক দখলের পর থেকে তাদের ঋণ বাড়তে থাকে। ওই সময়ে তিনি ইসলামী ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছেন। পাশাপাশি অন্যান্য ব্যাংক থেকেও নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ২৭টি ব্যাংক ও ১টি ফাইন্যান্স কোম্পানি থেকে তার ঋণ নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। নাসা গ্রুপের বেনামি কোম্পানি নামের ঋণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। কারণ এখনো সব বেনামি কোম্পানিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

আরবি/এসবি

Link copied!