ঢাকা শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

স্টার্টআপে ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ ও বিনিয়োগের সুযোগ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২৫, ০৭:৩৩ পিএম
বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো- সংগৃহীত

দেশীয় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ ও বিনিয়োগের সুযোগ রেখে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বুধবার (৯ জুলাই) ব্যাংকের এসএমই ও বিশেষ কর্মসূচি বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তাফা স্বাক্ষরিত ওই সার্কুলার প্রকাশিত হয়। এতে দেশীয় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানে তিনটি করে ধাপে সর্বনিম্ন ২ কোটি থেকে সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ এবং ইক্যুইটি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি প্রথমবারের মতো ব্যাংকিং খাতের জন্য ‘স্টার্টআপ’ উদ্যোগের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে ঋণ ও বিনিয়োগ লাভের যোগ্যতা, পদ্ধতি, অর্থায়ন সীমা এবং বিনিয়োগ কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এই সার্কুলারে।

সার্কুলার অনুযায়ী, এক বা একাধিক দেশি বা দেশি-বিদেশি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বা পরিচালিত এবং অপার সম্ভাবনাময়, বিস্তৃতিযোগ্য এবং নতুন ও উদ্ভাবনী পণ্য ও সেবা প্রদানে প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগকে স্টার্টআপ বলা হয়েছে। এ ধরনের স্টার্টআপে ঋণ হিসেবে বিনিয়োগের জন্য তফসিলি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের থেকে মাত্র শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ (০.৫%) সুদে তহবিল ঋণ নিতে পারবেন।

এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার একটি তহবিল রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া ফান্ড আবার স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি প্রতি অর্থবছরে ব্যাংগুলোর নিট মুনাফা থেকে ১ শতাংশ অর্থ নিয়ে একটি পৃথক একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখান থেকে অর্থ নিয়ে তফসিলি ব্যাংক ইক্যুইটি হিসেবে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারবে।

সার্কুলারে বিনিয়োগের সীমাও নির্ধারণ করা হয়। এতে বলা হয়, ঋণ হিসেবে বিনিয়োগ বাবদ তফসিলি ব্যাংক তিনটি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা অর্থায়ন করতে পারবে। প্রতিষ্ঠানের বয়স ২ বছরের কম হলে প্রাথমিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া যাবে।

প্রতিষ্ঠানের বয়স ২ থেকে ৬ বছরের মধ্যে হলে সেটি মধ্যম পর্যায়ে বিবেচিত হবে। আর সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা যাবে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত। প্রতিষ্ঠানের বয়স ৬ থেকে ১২ বছরের মধ্যে হলে সেটি বৃহৎ পর্যায়ে বিবেচিত হবে এবং সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া যাবে।

পক্ষান্তরে, বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান থেকেও সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ইক্যুইটি বিনিয়োগ করা যাবে স্টার্টআপে। এ ক্ষেত্রে কোনো সম্ভাবনাময় উদ্যোগ এবং গ্রাহক চাহিদা পূরণে সক্ষম এমন স্টার্টআপকে প্রাথমিক পর্যায় বা ‘সিড স্টেজ’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত গ্রাহক এবং কার্যক্রম শুরুর পরে বিগত সময়ে আয়ে সক্ষম এমন স্টার্টআপ হবে প্রবৃদ্ধি পর্যায় বা ‘গ্রোথ স্টেজ’। আর সবশেষে গ্রাহক পর্যায়ে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এমন স্টার্টআপকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও বিস্তৃতিযোগ্য বা ‘হাই গ্রোথ অ্যান্ড স্কেলেবল স্টেজ’ বলা হচ্ছে। তিনটি পর্যায়ে যথাক্রমে ২ থেকে ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত ইক্যুইটি বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সার্কুলারে অর্থায়ন প্রাপ্তিতে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান এবং এর উদ্যোক্তাদের যোগ্যতারও কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে স্টার্টআপ বাংলাদেশে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হওয়া, উদ্যোক্তাদের বয়স সর্বনিম্ন ২১ বছর হওয়া, প্রতিষ্ঠানের বয়স সর্বোচ্চ ১২ বছরের বেশি না হওয়া, কোনো উদ্যোক্তা ঋণখেলাপি হলে অর্থায়নে অযোগ্য হওয়া অন্যতম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে দেশীয় স্টার্টআপ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এই নীতিমালা দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।