রাজধানীর বাজারে গত এক সপ্তাহে ডিম ও পেঁয়াজের দামে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৫০ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৯৫ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই মূল্যবৃদ্ধিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের মধ্যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি ও রায়ের বাজারে ডিমের বর্তমান মূল্য পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে ফার্মের লাল ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৪৫ টাকা, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ২০ টাকা বেশি। পাড়া-মহল্লার খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে একই ডিম ১৫০ টাকা ডজন দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, সাদা ডিমের দাম কিছুটা কমলেও তা ভোক্তাদের জন্য ব্যয়বহুলই রয়ে গেছে।
রায়ের বাজারের অবস্থা আরও ভয়াবহ। এখানে ফার্মের লাল ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৫০ টাকা এবং সাদা ডিম ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা ডিম পিছু ১৩ টাকা হারে বিক্রি করছেন।
পেঁয়াজের বাজারেও একই চিত্র দেখা গেছে। মোহাম্মদপুর বাজারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাড়া-মহল্লায় এই দাম ৯৫ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। রায়ের বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৮৫ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডিম ব্যবসায়ী মনসুর আহমেদ জানান, গত সপ্তাহে প্রতি হাজার ডিম ১,১০০ থেকে ১,২০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ১,২০০ থেকে ১,২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ডিম উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি এবং সরবরাহ কমাকে দায়ী করেছেন।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ী হোসেন মিয়া বলেন, বর্তমানে পেঁয়াজের মৌসুম না থাকায় এবং সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে দাম কিছুটা স্থিতিশীল হবে।
দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ ভোক্তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, ডিম ও পেঁয়াজের দাম এত বেশি যে, তা কিনে পরিবারের চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, সরবরাহের ঘাটতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যাতে বাজার দ্রুত স্থিতিশীল হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। প্রয়োজনে পেঁয়াজ ও ডিম আমদানি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজরদারির কথাও জানানো হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা আশা করছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। তবে এর জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
এই মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ডিম ও পেঁয়াজ কেনা এখন বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজার সূত্রে জানা গেছে, এই পরিস্থিতিতে বিকল্প খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়েছে।
এই মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।