ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের ১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে বলে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক খাতে বৈশ্বিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর লক্ষ্য হলো আর্থিক খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি, সেবার পরিসর বিস্তৃতকরণ এবং ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসই) অর্থায়নের সুযোগ সহজ করা।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ঋণপ্রবাহ সহজ করতে ডিজিটাল ব্যাংককে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আবেদনকারীদের নির্ধারিত প্রস্তাবপত্রের সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা (অফেরতযোগ্য) আবেদন ফি জমা দিতে হবে। যেকোনো তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারে এ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে প্রদান করতে হবে। শর্ত পূরণ না হলে আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে।
আবেদনপত্র সরাসরি জমা দেওয়ার পাশাপাশি ই-মেইলের মাধ্যমেও প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র জমা দিতে হবে। বিস্তারিত নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) মহাব্যবস্থাপক মো. বায়াজিদ সরকারের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ধারাবাহিক প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ফলে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের চিত্র পরিবর্তিত হয়েছে। এই পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্থিক পণ্য ও সেবায় কার্যকারিতা আনতে এবং বিস্তৃত আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ব্যাংক অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
২০২৩ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালা প্রণয়ন করে। শুরুতে এই নীতিমালায় ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ১২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি তা বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। প্রচলিত ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে যেখানে ৫০০ কোটি টাকার প্রয়োজন, সেখানে ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য এই পরিমাণ কিছুটা কম রাখা হয়েছে।
ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হবে ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের আওতায়। আর পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালিত হবে ২০১৪ সালের ‘বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন’-এর অধীনে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থাকবে, তবে গ্রাহকসেবা দিতে কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম, সিডিএম বা সিআরএমের প্রয়োজন হবে না। সব ধরনের সেবা মোবাইল অ্যাপ বা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রদান করা হবে। অর্থাৎ এই ব্যাংকগুলো ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) সেবা দেবে না।
আগের সরকার আমলে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন ৫২টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ৯টি প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপন করা হয়। প্রথম ধাপে পাঁচটি ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়, নগদ, এসিআই-এর ‘কড়ি’, ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগ ডিজি-টেন, ব্র্যাকের বিকাশ এবং ব্যাংক এশিয়ার ডিজিটাল ব্যাংক লিমিটেড।
এর মধ্যে বিকাশ ও ব্যাংক এশিয়ার ডিজিটাল ব্যাংকগুলোর আলাদা লাইসেন্স লাগবে না, কারণ তারা বিদ্যমান ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। প্রথম অনুমোদনের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের আগস্টে নগদ ও কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসিকে এলওআই (উদ্দেশ্য পত্র) দেওয়া হয়।
তবে গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর নগদ ডিজিটাল ব্যাংককে ঘিরে বিদেশে কোম্পানি খোলার ও অর্থপাচারের অভিযোগ সামনে আসে। এই কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদের লাইসেন্স স্থগিত করে। অন্যদিকে, ‘কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক’ এখনো পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স পায়নি।
বর্তমানে ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালা ও গাইডলাইন সংস্কারের কাজ চলছে। আগামী ২৭ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় বিষয়টি আলোচনার জন্য এজেন্ডাভুক্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, ‘নতুন গাইডলাইন তৈরির কাজ চলছে এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য উপযুক্ত কাঠামো তৈরিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সচেষ্ট।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন