যশোরের শার্শার সীমান্তবর্তী পুটখালী, গোগা, উলাশী, বাগআঁচড়া ও কায়বাসহ ৫টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ইছামতী নদীর উজানে ভারত থেকে আসা পানিতে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এতে বাসাবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিদিন পানি বাড়ছে। ঘরের ভেতর পানি ওঠায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে অনেক পরিবার। পাশাপাশি আউশ ধান ও গ্রীস্মকালীন শাকসবজির খেত নিমজ্জিত রয়েছে পানিতে।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আক্রান্ত ইউনিয়নগুলোর প্রতিটি ওয়ার্ডে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছেে এবং পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
এদিকে দিন দিন পানি বৃদ্ধি হওয়ায় খারাপের দিকে যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কীকরণ অনুযায়ী, আগামী দুই দিন খুলনা বিভাগসহ যশোর এলাকায় অতি ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে শার্শার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।
জানা গেছে, এ মাসের প্রথম থেকে অবিরত হালকা-ভারি বর্ষণসহ ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢলে উপজেলার বাগআঁচড়া, কায়বা, উলাশী, গোগা ও পুটখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসাবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে পানি ঢুকেছে।
প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরে টিকতে না পেরে অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত থাকায় যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। কর্মজীবী মানুষ কাজ না পেয়ে বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহারিয়ার মাহমুদ রঞ্জু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি পানি উঠেছে। ২টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫টি পরিবার উঠেছে। তাদের আমরা খিচুড়ি রান্না করে দিয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে।’
উলাশী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আব্দুর রাশেদ জানান, এই ইউনিয়নের কন্যাদাহ, রামেরডাঙ্গা ও নারানতলা গ্রামের ২৫০টি পরিবার গত দেড় মাস যাবৎ পানিবন্দি। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এসব গ্রামের মানুষের জীবন প্রায়ই অচল। এরই মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে ১৫ থেকে ২০টি পরিবার।
সোমবার সরকারিভাবে খাদ্যসহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। আরও সহযোগিতার জন্য প্রশাসনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পানি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে জানান তিনি।
গোগা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ফারুক হোসেন বলেন, তার ইউনিয়নে প্রায় ১৩০০ পরিবার পানিবন্দি আছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখাসহ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
কায়বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা জানান, টানা বর্ষণ ও ভারতীয় উজানের পানিতে ৪০০ হেক্টর আউশ ধান এবং গ্রীস্মকালীন শাকসবজি নিমজ্জিত রয়েছে। ৬০০ হেক্টর জমি পানির নিচে থাকায় এবারের রোপা আমন চাষ হবে না। পানি আরও বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডা. কাজী নাজিব হাসান জানান, আগে থেকেই পানিবন্দি এলাকার স্কুলগুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা ছিল। উলাশী, বাগআঁচড়া ও কায়বা ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মাঝে উপজেলা প্রশাসন শুকনা খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে। বন্যা দুর্গতদের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খবর রাখা হচ্ছে। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন