দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ও অযত্ন-অবহেলায় বেহাল পিরোজপুরের নাজিরপুর মিনি স্টেডিয়াম। উপজেলার ক্রীড়া অঙ্গন চলছে ধুকে ধুকে। সংস্কারের অভাবে স্টেডিয়ামের অবকাঠামো ও মাঠের অবস্থা নাজুক। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, মাত্র ৫০ মিটার গ্যালারিতে ফাটল, বসার বেঞ্চগুলো ভেঙে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলায় ১৯৮৩ সালে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়। এই স্টেডিয়ামে দীর্ঘদিন যাবৎ কোনো উন্নয়ন বা সংস্কার-প্রকল্প গ্রহণ কিংবা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। অতঃপর ২০১২ সালে মিনি স্টেডিয়াম নামকরণ করে একটি দুই কক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবন, একটি শৌচাগর ও স্টেডিয়ামের চারপাশে বসার জন্য কয়েকটি বেঞ্চ স্থাপন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর রোডের পাশেই কয়েক একর জমির ওপর সুবিশাল মাঠ। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটি আসলে একটি স্টেডিয়াম! নেই কোনো সাইনবোর্ড। মিনি স্টেডিয়াম দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার ও অবহেলায় গরু-ছাগলের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার ভবন থাকলেও নেই কোনো কার্যক্রম। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ২০১২ সালে ভবন দুটি নির্মাণ করলেও এখন তা জরাজীর্ণ ও অরক্ষিত। ভবনের চারপাশে ও ভেতরে তৈরি হয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। শেওলা পড়েছে, ফাটল ধরেছে, ভবনের ভেতরে পরিবেশ দেখলে মনে হয় কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত। অরক্ষিত শৌচাগার ব্যবহার করছে পথচারী।
বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ক্রীড়াপ্রেমী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবি, ভবন দুটি, গ্যালারি, মাঠ দ্রুত সংস্কার করে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা সচল করে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করা হোক।
স্টেডিয়ামের খেলোয়াড়রা বলেন, ‘স্টেডিয়াম দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে মাঠের ঘাস অনেক বড় হয়ে গেছে, যার জন্য খেলাধুলা করতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই, যে কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। মাঠে খেলতে আসা খেলোয়াড়দের জন্য বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।’
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় স্টেডিয়ামের অবকাঠামো ও মাঠের অবস্থা নাজুক। মিনি স্টেডিয়ামটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বিধায় দিন দিন মাদকসেবীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যার পরে স্থানীয় আনসার-ভিডিপি অফিসের পেছনে, স্টেডিয়ামের আশপাশে, বেড়িবাঁধের রাস্তায় আনাগোনা বাড়ে তাদের। এই তিন স্থানে দিনদুপুরে স্কুল-কলেজপড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের অশ্লীল কর্মকাণ্ড দেখা যায়। উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারির দাবি জানান তারা।
সচেতন মহল বলছেন, নাজিরপুরে একটিমাত্র স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামের বর্তমানে খেলাধুলার পরিবেশ নেই। বড় বড় ঘাস, কাদা ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাচ্চারা এসে যে খেলবে কিংবা কোনো খেলার আয়োজন হবে, সেই পরিস্থিতি নেই। এখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দিলে স্টেডিয়ামটা আবার প্রাণ ফিরে পাবে।
নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া শাহনাজ তমা জানান, ‘মিনি স্টেডিয়ামের ঝুঁকিপূর্ণ গ্যালারি, ড্রেসিং রুম, শৌচাগার ও মাঠ সংস্কার করার জন্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই সাথে এ উপজেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম নির্মাণেরও প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করি, দ্রুতই বাস্তবায়ন হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন