অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থপাচার, সিন্ডিকেট গঠন এবং ফ্যাসিস্ট সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে সংগঠনটির সংস্কার পরিষদ প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে বর্তমান কমিটি। এই বিষয়ে গতকাল রোববার (৭ জুলাই) দুই পক্ষের উপস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। চলতি সপ্তাহেই এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের রায় ঘোষণা হতে পারে।
এই বিষয়ে বানিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মুহাম্মদ রেহান উদ্দিন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দুই পক্ষের উপস্থিতিতে প্রায় আড়াই ঘন্টাব্যাপী শুনানি নেওয়া হয়েছে। তারা উভয়ে তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। এখন তাদের বক্তব্য এবং সরবরাহ করা তথ্য যাচাইবাছাই করা হবে। যাচাইবাছাইয়ের পর চলতি সপ্তাহেই এই বিষয়ে রায় ঘোষণা করা হবে।
আটাব সংস্কার পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৮ মার্চ ২০২৫ তারিখে আটাবের বর্তমান কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগের দাবিতে প্রমাণসহ আবেদন করা হয়। পরে আরও কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য তাদের হাতে আসে, যা শুনানিতে উপস্থাপন করা হয়।
তাদের অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ২০১৭-২০১৯ মেয়াদে গঠিত ‘আটাব অনলাইন লিমিটেড’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে আটাবের ছায়াতলে প্রতিষ্ঠা করে সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ ও মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবৈধভাবে প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার চেক ইস্যু করে আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। মন্ত্রণালয় আটাব অনলাইনের নিবন্ধন বাতিল করলেও প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম চালিয়ে গেছে।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৩২তম ফেম ট্রিপের অংশ হিসেবে ৫৫ লাখ টাকার বেশি অর্থ জাপানে পাঠানো হয় আটাবের অনুমোদন ছাড়াই। এ টাকা ‘সায়মন ওভারসীজ’ নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাঠিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
কুয়েত ভিসা প্রসেসিং-এ অতিরিক্ত ৩০-৩৫ হাজার টাকা আদায় ও মালয়েশিয়া-সৌদি আরবগামী গ্রুপ টিকিট ব্লকিং করে কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়। সংস্কার পরিষদ এটিকে ‘মাফিয়া মডেল’ বলে উল্লেখ করেছে।
সংগঠনটির রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বলা হয়, বর্তমান সভাপতি এবং মহাসচিব আওয়ামী লীগপন্থি এবং দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে আটাব পরিচালনা করছেন। অভিযোগকারীদের দাবি, তারা নিয়ম রক্ষার নামে নির্বাচন করে প্রতিপক্ষকে বঞ্চিত করে আসছেন।
এসব অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে আটাবের বর্তমান কমিটি। এক লিখিত বিবৃতিতে সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ ও মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ জানান, সংগঠনটি ১৯৭৬ সাল থেকে দেশের প্রায় ৪ হাজার ট্রাভেল এজেন্সিকে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে এবং সবসময় সরকার অনুমোদিত নিয়মে নির্বাচন ও অডিট পরিচালনা করে।
তারা জানান, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই, বরং সরকারের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ রাখা তাদের দায়িত্বের অংশ। নির্বাচন ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু। তিনটি প্যানেল অংশ নেয় এবং সর্বোচ্চ ভোটে তারা জয়লাভ করে।
অর্থপাচার ও সিন্ডিকেটের অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়, ‘ফেম ট্রিপ’ ছিল ব্যক্তিগত খরচে স্বেচ্ছাসেবী সফর এবং কুয়েত ভিসায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আটাব সদস্যই নয়।
সংস্কার পরিষদকে অবৈধ ও বিভ্রান্তিকর গোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করে আটাব জানায়, এ গোষ্ঠী অতীতে বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালিয়ে এসেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শুনানি শেষে বিষয়টি এখন চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায়। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই রায় ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।