প্রাক্তন স্ত্রীর বিরুদ্ধে হামলা ও সম্পত্তি দখলের অভিযোগ তুলেছেন ক্যাপিটাল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাররম হোসেন খান।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, তার প্রাক্তন স্ত্রী জেবা আমিনা আহমেদ নিজেকে বিএনপির নেত্রী পরিচয় দিয়ে মব তৈরি করে ঢাকার বারিধারায় তার ফ্ল্যাটে হামলা চালিয়েছেন।
মোকাররম হোসেন জানান, জেবা আমিনা আহমেদ নিজেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সহসভাপতি ও ঝালকাঠি জেলা বিএনপির নেত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে জেবা আমিনা তার ও তার পরিবারের ওপর একের পর এক প্রতারণা, হয়রানি ও সহিংসতা চালিয়ে আসছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোকাররম হোসেন জানান, ২০০৫ সালে তিনি জেবা আমিনার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে পরবর্তীতে জানতে পারেন, বিয়ের সময়ও জেবা আমিনার আগের স্বামীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক বজায় ছিল এবং প্রকৃতপক্ষে তার তালাক হয় তাদের বিয়ের দেড় বছর পর।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘একাধিক বিবাহ ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ। সে এই সত্য গোপন করে কাজীর কাছে মিথ্যা বলে আমাদের বিবাহ সম্পন্ন করায়।’
তিনি জানান, জেবা আমিনা আর্থিক দিক থেকে চরম দুরবস্থায় ছিলেন এবং তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ধার নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই অর্থ তিনি ফেরত দেননি। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর ২০১৭ সালে তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ করেন।
মোকাররম খান জানান, গত ২৭ জুন ঈদের ছুটিতে তিনি পরিবারের সঙ্গে দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। সেই সুযোগে রাতে আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার বারিধারার ২, ইউ.এন. রোডের তার মালিকানাধীন ভবনের ২০১ ও ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটে জেবা আমিনার নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি সশস্ত্র দল হামলা চালায়।
তিনি বলেন, ‘তারা নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহকর্মীদের মারধর করে, ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরা ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এরপর তালা ভেঙে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে আমাদের গৃহকর্মীদের মারধর ও নারী কর্মীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। এরপর মূল্যবান হীরার গয়না, স্বর্ণালংকার, রোলেক্স ও ওমেগা ঘড়ি, নগদ অর্থসহ প্রায় ৭৭ লাখ টাকার সম্পদ লুট করে।’
তার দাবি অনুযায়ী, ঘটনার সময় ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে হামলাকারীদের কাছ থেকে ২০১ ও ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটের চাবি উদ্ধার করে। তবে পরবর্তীকালে পুলিশ ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটের চাবি ফেরত দিলেও ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটের চাবি এখনো ফেরত দেয়নি। ওই ফ্ল্যাটে তার মেয়ে মাহিরা হোসেন খান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ব্যবহারের মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ করেন মোকাররম হোসেন খান। পরে তার মেয়ে মাহিরা হোসেন খান চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, জেবা আমিনা একাধিকবার তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিজের বলে দাবি করেছেন এবং জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে কোম্পানি কোর্টে মামলা করেছেন। এসব বিষয়ে গুলশান থানায় একাধিক এজাহার দায়ের করা হয়েছে। ফ্ল্যাট সংক্রান্ত একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে ২০২০ সাল থেকে স্থিতিবস্থা জারি আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মোকাররম হোসেন খান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘বিএনপি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এই দলের ভাবমূর্তি জেবা আমিনার মতো বিতর্কিত নেত্রীদের কর্মকাণ্ডে কলুষিত হোক, আমরা তা চাই না। আমরা আশা করি, বিএনপি দলীয় পর্যায়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
মোকাররম হোসেন খান তার ও পরিবারের পক্ষ থেকে চার দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার, লুট হওয়া সম্পদ উদ্ধার, পুলিশের হেফাজতে থাকা ফ্ল্যাটের চাবি ফেরত, সরকার ও প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি হামলার সিসিটিভি ফুটেজ, স্থিরচিত্র, আদালতের নথি, তালাক ও বিবাহের সনদ, পুলিশের জবানবন্দি ভিডিওসহ একাধিক প্রমাণ উপস্থাপন করেন।

 
                             
                                    





 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন