শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শোষণ রোধে সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
তারা বলেছেন, দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শিশুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের ওপর। নিরাপদ পরিবেশের অভাবে শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং তাদের জীবনে একটি স্থায়ী ক্ষত জায়গা করে নেয়। শিশুদের সহিংসতা থেকে সুরক্ষা দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) ফার্মগেটস্থ রাজধানীর আজিমুর রহমান মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে গার্মেন্ট শ্রমিকদের শিশুদের জন্য কমিউনিটি-ভিত্তিক শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা’ শীর্ষক সংলাপে এই আহ্বান জানানো হয়। উন্নয়ন সংস্থা ‘টেরে ডেস হোমস্ নেদারল্যান্ডস’ (টিডিএইচ-এনএল), উন্নয়ন সংস্থা ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (বিটিএস)’ ও ‘ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার (ভার্ক)’ আয়োজিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন টিডিএইচ-এনএল বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার নজরুল ইসলাম।
সংলাপে বক্তৃতা করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আবদুল হামিদ মিয়া, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের প্রকল্প ব্যবস্থাপক রইসুল ইসলাম, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)’র উপ-পরিচালক তাইফুর রহমান, ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী, বিটিএস’র নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা, ভার্কের উপ-নির্বাহী পরিচালক মাসুদ হাসান প্রমূখ।
সংলাপে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন টিডিএইচ-এনএল’র প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর নূরুল কবির। তিনি বলেন, শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শোষণ রোধে কেবল আইন নয়, প্রয়োজন সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগ। আর গার্মেন্টস শ্রমিকদের শিশু সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে স্থানীয়ভাবে শিশু সুরক্ষার কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যা কমিউনিটি-ভিত্তিক, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে। এক্ষেত্রে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সমাজকল্যাণ বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, শিশুর অধিকার নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র। তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু আমরা তা করতে পারি না। দেশে অনেক আইন আছে, যেগুলো শিশুর অধিকার বাস্তবায়ন করার জন্য। কিন্তু তা কতটুকু যথাযথভাবে প্রয়োগ হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শিশুর নির্যাতন রোধে যে দুটি আইন আছে, সে সকলে জানলে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ করা যাবে। সরকার এসব কাজ, একা করতে পারবে না। সবাই এগিয়ে এলে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বিটিআরসি কর্মকর্তা তাইফুর রহমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণা করে শিশু অপহরণ, যৌন নির্যাতনের মতোও ঘটনা ঘটে। সাইবার ওয়ার্ল্ড খুব চাকচিক্য একটি জায়গা। শিশুরা সেটা বুঝতে পারে না। তাই শিশুদের সাইবার বিষয়ে সচেতনতা করা জরুরি। আমরা চাই শিশুরা নিরাপদে থাকুক।
ইনসিডিনের এ কে এম মাসুদ আলী বলেন, শ্রমিক পরিবারের শিশুদের দেখভাল করতে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের উদ্যোগ নিতে হবে। অনেকেই কর্মের খোঁজে পরিবারসহ গ্রাম থেকে নগরে আসেন। কিন্ত শিশুদের যে সুবিধা গ্রামে পাওয়া যায়, যা নগরে নাই। সমাজসেবা অধিদপ্তর এ বিষয়ে কাজ করবে বলে আমি আশাবাদী।
সভাপতির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম বলেন, টেরে দেস হোমস নেদারল্যান্ডস বর্তমানে ঢাকার মিরপুর ও সাভারে ১৬টি আর্লি চাইল্ডহুড ডেভলপমেন্ট সেন্টার পরিচালনা করছে। এসব কেন্দ্রে পাঁচশোর বেশি প্রান্তিক সম্প্রদায়ের শিশু রয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসরকারি কারখানা শ্রমিক পরিবারের সন্তান। শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সম্মিলিত ভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।