শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪, ১২:২৪ পিএম

আরও ১০০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আসছে

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪, ১২:২৪ পিএম

আরও ১০০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আসছে

ছবি সংগূহীত

ঢাকা: সাবেক মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলা, রাজনীতিবিদসহ আরও শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাইবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সেই তালিকায় থাকছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে এই তালিকা।

এর আগে দুদকের আবেদনে প্রেক্ষিতে ১০৩ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। দুদকের অনুসন্ধানে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিস্তর প্রমাণ মিলছে।


দুদকের অনুসন্ধানের জালে ধরা পড়ার আগেই কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন, আবার কেউ কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছেন বিভিন্ন সময়ে। অনেকেই আছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

তবে যারা এখনো গ্রেপ্তার হননি সেইসব মন্ত্রী-এমপি ও হেভিওয়েট কিংবা তাদের পরিবার যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেই উদ্যোগ নিয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পদত্যাগের পর তার ঘনিষ্ট সহচর বা দোসর শত শত হেভিওয়েটের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলমান। মূলত যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান তারা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্যই আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে।

গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দেশ ছেড়ে পালানোর প্রবণতা বেড়ে যায়। বিদেশে যাওয়ার চেষ্টার সময় অনেকেই এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। গেল এক মাসে আদালতের নির্দেশে দুদক সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এমপিসহ হেভিওয়েট ১০৩ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিলেও এরই মধ্যে দেশ ছেড়েছেন অনেকেই। অনেককে আবার দেশত্যাগের পর দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

ইতোমধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্যসহ বেশকিছু ভিআইপির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ তালিকার মন্ত্রী-এমপি কিংবা আমলা এবং তাদের পরিবারের সদস্য যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সে কারণে ধাপে ধাপে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগে ধাপে ধাপে শতাধিক ব্যক্তিকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর আরও শতাধিক মন্ত্রী ও এমপি এবং প্রভাবশালীদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেছে অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। পৃথক আবেদনে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে যা আদালতের অনুমোদনক্রমে বাস্তবায়ন হবে বলে জানা গেছে।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুদক কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে গঠিত ওই টিম ইতোমধ্যে নথিপত্র তলব করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে চিঠি দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। পাশাপাশি আরও কয়েক ডজন হেভিয়েট দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ভিআইপিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সে কারণেই তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন রয়েছে।

দুদক কর্মকর্তারা বলেন, দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন মন্ত্রী-এমপিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে গ্রেপ্তার হোক বা না হোক দুদকের লক্ষ্য যাতে কেউই দেশত্যাগ না করতে পারে। সে কারণে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। কমিশন অনুমোদন দিলেই তালিকা আদালতে পাঠানো হবে। আদালতে আদেশ দেশের সব স্থল ও বিমানবন্দরে পাঠানো হবে।

বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দুদকের আদালতে দেওয়া আবেদনে বলা হচ্ছে, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় এমপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার এমপিদের দেশ ছেড়ে বিদেশে পালাতে পারেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই দুদকে জমা পড়ছে অসংখ্য অভিযোগ। যার অনুসন্ধান চালাচ্ছে সংস্থাটি। গত ১৫ বছরে মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে কারও আয় বেড়েছে, কারও বেড়েছে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০০ গুণ থেকে কয়েক হাজার গুণ। কারও ক্ষেত্রে সম্পদ ও আয় বেড়েছে লাখগুণ পর্যন্ত। নির্বাচনী হলফনামার তথ্য নিয়ে টিআইবির করা এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সূত্র ধরেই ৪১ সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। 
এরপর ধাপে ধাপে মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ দুর্নীতি, সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দের অর্থ লোপাট ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তা বিদেশে পাচারের অভিযোগ যুক্ত হতে থাকে তাদের বিরুদ্ধে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যারা ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা গেছে এমন দৃষ্টান্ত খুবই বিরল। উচ্চপর্যায়ের কোনো ব্যক্তি যারা ক্ষমতাবানদের সঙ্গে বিরাগভাজন হয়েছেন সেক্ষেত্রে অনেক প্রতিষ্ঠানের অতিতৎপরতাও আমরা দেখেছি।
গোয়েন্দারা বলছেন, অভিযুক্তদের মধ্যে শতাধিক ব্যক্তি বিভিন্নভাবে সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার তৎপরতা এখনো চালাচ্ছেন। যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি দেশ ছেড়ে পালাতে তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা প্রত্যেকেই দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযুক্ত। অনেকের বিরুদ্ধে দুদক ইতিমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে তাদের অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে।

দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, যেখানে যা প্রয়োজন সেখানে অনুসন্ধান কর্মকর্তা কাজ করবে। এবং প্রতি ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে কমিশন নির্দেশ দেয় না। কমিশন তাঁকে দায়িত্ব দেয়, যে তুমি অনুসন্ধান করো। অনুসন্ধান কী কী করবে তা আইনে, বিধিতে বলা আছে। সেই আইন-বিধি অনুযায়ী তিনি অনুসন্ধান করবেন। যেখানে যা দরকার, সেখানে তা করবেন।

গেল দেড় মাসে অবৈধ সম্পদ-অর্থপাচারসহ দুর্নীতির অভিযোগে অর্ধশতের বেশি মামলা করেছে দুদক। তবে এখন পর্যন্ত দুদকের এসব মামলায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এর আগে, শতাধিক ব্যক্তিকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মন্ত্রীরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, সাবেক শিল্পমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, প্রাথমিক ও মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া সংসদ সদস্যরা হলেন-সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল, শেখ আফিল উদ্দীন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, কাজী নাবিল আহমেদ, ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম, মামুনুর রশিদ কিরণ, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সরওয়ার জাহান, কাজিম উদ্দিন, নুর-ই-আলম চৌধুরী, বেনজীর আহমেদ ও জিয়াউর রহমান প্রমূখ।
 

আরবি/এস

Link copied!