রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সংখ্যালঘুর বসতিতে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচ আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে গঙ্গাচড়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে আসামিদের হাজির করা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক কৃষ্ণ কমল রায় আগামীকাল রিমান্ড শুনানির দিন নির্ধারণ করেন এবং আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোর্ট ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে পাশের জেলা নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওইদিন রাত ৯টার দিকে ভুক্তভোগী রবীন্দ্রনাথ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ১২০০ জনের বিরুদ্ধে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা করেন।
গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ আসামি হলেন কিশোরগঞ্জ উপজেলার সিংগেরগাড়ি মাঝাপাড়া গ্রামের মো. ইয়াছিন আলী (২৫), মাগুড়া শ্রীপাড়ার স্বাধীন মিয়া (২৮), দক্ষিণ চাদখানা মায়াপাড়ার আশরাফুল ইসলাম (২৮), উত্তর সিংগেরগাড়ি পাঠানপাড়ার এস এম আতিকুর রহমান খান আতিক (২৮) এবং দক্ষিণ সিংগেরগাড়ি চওড়াপাড়ার সাদ্দাম হোসেন সেলিম (২২)।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (২৬ জুলাই) ফেসবুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট দেয় আলদাদপুর ছয়আনি গ্রামের এক সংখ্যালঘু কিশোর। পোস্টটি ভাইরাল হলে স্থানীয় মুসলিম জনতার মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাত ১০টার দিকে একদল উত্তেজিত লোকজন তার এক স্বজনের বাড়িতে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে।
রোববার (২৭ জুলাই) কিশোরের বিরুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা দায়ের করে তাকে আদালতের মাধ্যমে কিশোর পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কিন্তু এরপর দিনভর বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সিংগেরগাড়ি পারেরহাট, বাংলাবাজার, মাগুড়া, এবং রংপুরের গঙ্গাচড়া থানার খলেয়া ও বেতগাড়ীসহ আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ জড়ো হয়ে কটূক্তিকারীর ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করে। এরপর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
পরে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ১৫ বান্ডিল টিন, ৩০ বস্তা শুকনো খাবার, ২০টি মাটির চুলা এবং চারটি টিউবওয়েল মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে। যেসব উপকরণ লাগবে, তা প্রশাসন থেকে সরবরাহ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :