ঢাকা রবিবার, ০১ জুন, ২০২৫

রিমান্ডে সুব্রত বাইনের চাঞ্চল্যকর বক্তব্য

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ০৯:৪৮ এএম
সুব্রত বাইনের বর্তমান ও আগের ছবি। ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর এক ষড়যন্ত্রের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তিনি।দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘টার্গেট কিলিং’ পরিচালনা করে আসছিলেন। রিমান্ডে জেরার মুখে এসব তথ্য জানিয়েছে সুব্রত নিজেই। এ ছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদে সে আরও বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের টার্গেট করে সহিংসতা সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল সুব্রত বাইন ও তার বাহিনীর। শুধু তাই নয়, সে নিজেই স্বীকার করেছে যে, ‘র’-এর হয়ে দায়িত্ব পালন করেছে নেপাল, দুবাই ও বাংলাদেশে। বাংলাদেশের সাবেক এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে তাকে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকে হত্যার মিশনও দেওয়া হয়েছিল।

রিমান্ডে থাকা অবস্থায় তদন্তকারীরা সুব্রতের কাছ থেকে একটি অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট ফোনের তথ্যও পেয়েছেন, যা পাঠানো হয়েছিল ভারতের মোল্লা মাসুদের মাধ্যমে। এই ফোনের মাধ্যমে সুব্রত নিয়মিতভাবে ‘র’-এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখত বলে দাবি তদন্ত কর্মকর্তাদের।

জানানো হয়, আয়নাঘরে আটক থাকা অবস্থাতেও তাকে দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য স্নাইপার ট্রেনিং দেওয়া হয়। বাতাসের গতি, আর্দ্রতা ও মুভিং টার্গেটের গতি বিশ্লেষণ করে গুলি করার মতো স্পর্শকাতর কৌশল শেখানো হয়েছিল।

২০০১ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন সরকার ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করলে সুব্রত বাইন মোল্লা মাসুদকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। যশোর, কলকাতা ও মধ্যপ্রদেশে সক্রিয় থাকাকালীন সে ভারতের এসটিএফ ও ‘র’-এর নজরে আসে এবং গোপনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।

ভারতের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার এসকে চক্রবর্তীর মধ্যস্থতায় সুব্রত, মাসুদ ও আরেক সহযোগী মধু বাবুকে নিয়ে একটি কমান্ডো প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয় বলে জানানো হয়েছে।

সুব্রতের জবানবন্দি অনুযায়ী, গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশেই সে দুবাইয়ে পাড়ি জমায় এবং সেখানে পলাতক মোস্ট ওয়ান্টেড টাইগার মেমন ও দাউদ ইব্রাহিমের নেটওয়ার্কে প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু সে মিশনে সফল না হওয়ায় পরে নেপাল হয়ে আবার ভারতে ফিরে যায় এবং শেষমেশ কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে কলকাতা প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় সিলেট সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে আনা হয়। র‌্যাব সদর দপ্তরে তার সঙ্গে দেখা করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং একাধিক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা। তাকে লন্ডনে একটি হত্যা মিশনে পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং সফল হলে পরিবারসহ কানাডায় বসবাসের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, পাকিস্তানি পাসপোর্ট তৈরি করে লন্ডনে পাঠানোর সব প্রস্তুতি চলছিল। এমনকি পোশাক ও চলাফেরাতেও যেন সে একজন পাকিস্তানি নাগরিক মনে হয়- এমন নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর সুব্রত বাইনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে সে প্রকাশ্যে আসা শুরু করে এবং পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করে ‘র’-এর সঙ্গে। মোল্লা মাসুদকে আবারও বাংলাদেশে পাঠানো হয়, যার মাধ্যমে সুব্রতের কাছে পাঠানো হয় স্যাটেলাইট ফোন ও সরঞ্জামাদি।

নেপালে অবস্থানরত আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী লেদার লিটনের মাধ্যমে পলাতক আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে সুব্রতের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানান, সুব্রত বাইন ও তার সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। তবে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাই।