দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে নতুন করে বড় উত্থান দেখা দিয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের জোয়ারে রিজার্ভ আবারও বেড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী এই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ বিলিয়ন ডলার।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশের গ্রস রিজার্ভ এখন ৩২.১৪ বিলিয়ন ডলার। বিপিএম-৬ অনুযায়ী হিসাব করলে তা ২৭.৩৪ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের একটি পৃথক হিসাব রয়েছে, যা কেবল আইএমএফকে জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী এই নিট রিজার্ভ বর্তমানে ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
সাধারণ নিয়মে, একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকা উচিত। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন প্রান্তসীমায় রয়েছে। রিজার্ভ দেশের অর্থনৈতিক স্থিতি ও বৈদেশিক লেনদেনের সক্ষমতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক। রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ বা অনুদান থেকে যে বৈদেশিক মুদ্রা আসে, সেটিই রিজার্ভ গঠনের মূল উৎস।
অন্যদিকে, আমদানি ব্যয়, ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ, বিদেশে কর্মরতদের পারিশ্রমিক, শিক্ষার্থী বা পর্যটকদের খরচসহ বিভিন্ন কারণে বৈদেশিক মুদ্রা বেরিয়ে যায়। আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করেই রিজার্ভ বাড়ে বা কমে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ কমেছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হয়নি, বরং উল্টো ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনে রিজার্ভ শক্তিশালী করা হয়েছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রেমিট্যান্সে ধারাবাহিক ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। জুলাইয়ে দেশে এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার ডলার, আগস্টে ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং সেপ্টেম্বরে বেড়ে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলারে পৌঁছেছে। এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয় ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬.৮ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত এক দশকে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। ২০১৩ সালের জুনে রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫.৩২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৮ সালে বেড়ে ৩২.৭১ বিলিয়ন ডলার হয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় এবং অক্টোবরের ৮ তারিখে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে।
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮.০৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। তবে পরবর্তী সময়ে ডলার সংকট, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং ঋণ পরিশোধের কারণে রিজার্ভ ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ২১.৫০ বিলিয়ন ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩০.৩৫ বিলিয়ন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৬.৩০ বিলিয়ন এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে মোট রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩১.৬৮ বিলিয়ন ডলার।
সব মিলিয়ে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক বৃদ্ধি এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা দেশের রিজার্ভে নতুন প্রাণ ফেরিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ধারা টিকিয়ে রাখতে রপ্তানি আয় বাড়ানো, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং ডলার ব্যবস্থাপনায় স্থিতিশীল নীতি বজায় রাখা জরুরি। বর্তমানে রিজার্ভের এই পুনরুদ্ধার বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক ইঙ্গিত দিচ্ছে।




সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন