প্রাথমিক শিক্ষায় একদিকে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে মাঠপর্যায়ের শিক্ষকরা নানা বৈষম্যের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কার্যকর পদক্ষেপ খাতটির অগ্রগতির ইঙ্গিত দিলেও,শিক্ষকসমাজের মধ্যে অসন্তোষ ও বঞ্চনার ক্ষোভ গভীর হচ্ছে।
সংস্কারে নতুন গতি
২০২৫ সালের শুরুর দিকে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে একাধিক সংস্কারমূলক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
৩৭ হাজার নতুন শিক্ষক নিয়োগ: দীর্ঘদিনের শিক্ষক সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে প্রায় ৩৭ হাজার নতুন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত উন্নত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
পদোন্নতি নীতিমালা হালনাগাদ: সহকারী শিক্ষকদের জন্য দীর্ঘদিন আটকে থাকা পদোন্নতির নিয়ম নতুনভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতির কথা বলা হয়েছে।
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা পুনর্বহাল: বাতিল হওয়া প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা আবার চালুর ঘোষণা এসেছে। যদিও এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, মন্ত্রণালয় বলছে এটি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের একটি কার্যকর মাপকাঠি হবে।
ক্ষোভে উত্তাল শিক্ষক সমাজ
এই উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যেও জমে উঠেছে শিক্ষকদের ক্ষোভ। শিক্ষক সংগঠনগুলো বলছে, ঘোষণার পরও বহু শিক্ষক বছরের পর বছর ধরে পদোন্নতি পাচ্ছেন না।
আন্দোলনরত শিক্ষক মো. সাঈদ আবদুল্লাহ জানান, ‘আমরা এখনও ১৩তম গ্রেডে বেতন পাই, যা জীবনযাত্রার সঙ্গে মানানসই নয়। আমাদের দাবি, কমপক্ষে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করতে হবে।’
পদায়ন-বদলির ক্ষেত্রে অনিয়ম, রাজনৈতিক প্রভাব এবং অনুমোদনহীন স্কুলে রেজিস্ট্রেশনের অভিযোগও আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
জুলাই মাসজুড়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় শিক্ষকরা মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি পালন করছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক মহাসমাবেশে তারা চার দফা দাবি তুলে ধরেন: ন্যায্য বেতন কাঠামো, সময়োপযোগী পদোন্নতি, স্বচ্ছ বদলি এবং প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধ।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শিক্ষকদের দাবিগুলো পর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাস্তবায়নের বিষয়েও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে শিক্ষকরা বলছেন, এ ধরনের প্রতিশ্রুতি অনেক আগেও দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. ফারজানা হক বলেন, ‘শিক্ষকদের ন্যায্যতা নিশ্চিত না হলে সংস্কার কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকবে। মর্যাদা ও স্বচ্ছতা ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষায় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন,‘নীতিনির্ধারকদের বার্তা ও মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা এক নয়। এই বিভাজন ঘোচাতে হলে প্রয়োজন বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ।’
আপনার মতামত লিখুন :