বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে কবি ও রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘দেশে সেক্যুলাররা ইসলামপন্থিদের কথা শুনতে পারে না, ইসলামপন্থিরা সেক্যুলারদের কথা সহ্য করতে পারে না। এমন বাস্তবতা নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। অপরের প্রতি আকুতি ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব।’
ফরহাদ মজহার মনে করেন, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, ‘এখানে রাজনৈতিক উপস্থিতি বেশি। যদিও অসহনশীলতা আছে, তবে অ্যাকাডেমিক ফ্রিডম উন্নয়ন করলে এটি গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রথম ধাপ হতে পারে।’
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৫টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালটির সামাজিক সংগঠন ‘রেনেসাঁস’র আয়োজনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এখন যারা নির্বাচন চান, তারা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসন করছেন। গণতন্ত্র এবং ফ্যাসিবাদ খুবই কাছাকাছি। হিটলার, মুসোলিনি, শেখ হাসিনা—সবাই নির্বাচিত হয়েই এসেছিলেন। ফলে যারা এখন নির্বাচন করছেন, তারা ফ্যাসিবাদকেই পুনর্বাসন করছেন।’
তিনি বলেন, কারণ আমরা আমাদের মূল সমস্যা খুঁজছি না। নির্বাচন ছাড়াও আমাদের শিক্ষা, নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন সংকটের সমাধান হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকারের দায়িত্বগ্রহণের মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব হয়েছে। ৫ আগস্টে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এরপর তিন দিন সরকার বিহীন ছিল। জনগণের হাতে নতুন রাষ্ট্র গঠনের ক্ষমতা এসেছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। ৮ আগস্টে সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব হয়েছে। শেখ হাসিনার সংবিধানে শপথের মাধ্যমে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশে সেক্যুলাররা ইসলামপন্থিদের কথা শুনতে পারে না, ইসলামপন্থিরা সেক্যুলারদের কথা সহ্য করতে পারে না। এমন বাস্তবতা নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। অপরের প্রতি আকুতি ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব।’
সভায় বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন। তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশে শিক্ষায় সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেওয়া হয় বাংলাদেশে। বিশ্ববিদ্যালয় কেন বাজেট পাচ্ছে না, কেন ভালো শিক্ষক ও ছাত্র আসছে না—এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা দরকার। শিক্ষার্থীদের অধিকারের রূপরেখা এবং রাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্ধারণে গণতন্ত্র অপরিহার্য।’
অধ্যাপক আরও বলেন, ‘দেশের শিক্ষকদের রাজনৈতিক তিন দল—আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত। বাকিরা খড়কুটো। শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রশ্নে সোচ্চার হবে, আমাদেরও কাঠামো দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তর্ক-আলোচনার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, কেউ আল্লাহকে অস্বীকার করলে তাকে 'সাতেমে রাসুল' বলা যাবে না। তবেই গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হবে।’
সভায় নোট স্পিকার হিসেবে প্রস্তাবনা তুলে ধরেন রেনেসাঁস’র সংগঠন রাবেয়া মুহিব। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, অধ্যাপক আ-আল মামুন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল মাসউদ, নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুষ্মিতা চক্রবর্তী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব, ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহিন বিশ্বাস এষাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন