বুধবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ রাব্বী

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ০৯:৪৯ পিএম

তিতুমীর কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চান শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা 

মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ রাব্বী

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ০৯:৪৯ পিএম

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত সরকারি তিতুমীর কলেজ দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর যাত্রা শুরু ১৯৬৮ সালে, যখন তৎকালীন গভর্নর মোনায়েম খান ছাত্র আন্দোলন দমন করতে জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রি শাখাকে স্থানান্তর করেন ‘জিন্নাহ কলেজ’ নামে।

তবে ইতিহাস ভিন্ন পথে মোড় নেয় ১৯৭১ সালের উত্তাল সময়ে। ইয়াহিয়া খানের জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার পর ক্ষুব্ধ ছাত্ররা কলেজের জিন্নাহ নামক সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলেন। ২ মার্চ ১৯৭১ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীরের স্মরণে কলেজটির নামকরণ করা হয় ‘তিতুমীর কলেজ’।

কলেজ প্রতিষ্ঠার মাত্র এক বছর পরই শুরু হয় ছাত্র সংসদ কার্যক্রম। ১৯৬৯-৭০ শিক্ষাবর্ষে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন। সে নির্বাচনে ভিপি ছিলেন সিরাজউদ্দৌলা ও জিএস নির্বাচিত হন মফিজুল ইসলাম। ছাত্র সংসদ ছিল কলেজ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের মঞ্চ, যা দ্রুতই তাদের অধিকার আদায়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং জাতীয় ইস্যুতে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ও পরবর্তী বছরগুলোতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রাখে যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ছাত্র সংসদ।

তবে স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দলীয় প্রভাবের কারণে ছাত্র সংসদের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। কিছু সময় অন্তর নির্বাচন হলেও তা ধারাবাহিকভাবে চলেনি। অবশেষে ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষে অনুষ্ঠিত হয় সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন। সে নির্বাচনে ভিপি ছিলেন আক্কাছুর রহমান আঁখি এবং জিএস ছিলেন আনোয়ারুল হক আনোয়ার। এর পর থেকে অজানা কারণে আজ পর্যন্ত প্রায় দুই যুগ ধরে তিতুমীর কলেজে আর কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি।

২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরু হওয়ার ধারাবাহিকতায় এবার তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরাও তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের দাবিতে এগিয়ে এসেছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্যাম্পাসে পড়াশোনার পাশাপাশি নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ থাকা উচিত।

ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে ক্যাম্পাসে নেতৃত্ব, জবাবদিহিতা ও একতার চর্চা গড়ে উঠবে বলে মনে করেন রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আদুরী জাহান। তিনি বলেন, ‘আমি চাই তিতুমীর কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক, কারণ এটি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারের অংশ। তবে নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও নিয়মতান্ত্রিক হতে হবে।’

তিনি বলছেন, ‘একটি স্বচ্ছ ছাত্র সংসদ গঠিত হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের নানামুখী সমস্যার সমাধান ও পড়াশোনার জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করতে পারবে। বর্তমানে সংসদ না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরি, ল্যাব, ক্লাসরুম, আবাসন, পরিবহন ও স্যানিটেশন ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা ইভটিজিং ও নিরাপত্তার অভাবে অসুবিধার মুখোমুখি। ছাত্র সংসদ থাকলে আমরা আমাদের মতামত প্রকাশ করতে পারব, নিরাপত্তা ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে পারব এবং নারী শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা সহজ হবে। এ ছাড়াও এটি নেতৃত্ব, জবাবদিহি ও একতার চর্চাও গড়ে তুলবে।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতি আমার প্রত্যাশা থাকবে, তারা শুধু রাজনীতি নয়, শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সমস্যা সমাধানেও মনোযোগ দিক। নিরাপদ ক্যাম্পাস, স্যানিটেশন, পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ এবং সমতা ও অন্তর্ভুক্তির চর্চা নিশ্চিত করা তাদের মূল কাজ হওয়া উচিত। সংগঠনগুলো যেন শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধি হয়ে কাজ করে, কোনো দলীয় স্বার্থে নয়।’

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তারেক হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই ক্যাম্পাসে পড়াশোনার পাশাপাশি নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ তৈরি হোক। একটি ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের চিন্তা-চেতনা ও মতামত প্রকাশের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম। এতে করে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিগুলো দ্রুত প্রশাসনের কাছে পৌঁছানো যায় এবং সমস্যার সমাধানও সহজ হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তিতুমীর কলেজে নির্বাচন না থাকায় শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর দুর্বল হয়ে পড়েছে যা শিক্ষার পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। তাই আমাদের একটাই দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু তিকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, যাতে শিক্ষার্থীরা আবারও গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ পায়।’

গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী বিল্লাল হুসাইন বলেন, ‘তিতুমীর কলেজের ছাত্র সংসদ আমাদের কেবল শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে না, এটি আমাদের নেতৃত্ব বিকাশের মঞ্চ। দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচন না হওয়ায় আমরা আমাদের স্বতন্ত্র মতামত প্রকাশ করতে পারছি না, শিক্ষার্থীর সমস্যা দ্রুত প্রশাসনের কাছে পৌঁছানোর সুযোগও সীমিত হয়েছে। আমরা চাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে সকল শিক্ষার্থী যেন স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। ছাত্র সংসদ কেবল ভোটের অনুষ্ঠান নয়, এটি আমাদের একতা, দায়িত্বশীলতা এবং সক্রিয় শিক্ষার্থী সমাজ গড়ে তোলার সুযোগ। তাই আমাদের একটাই দাবি দ্রুত সময়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, যাতে আমরা আবার আমাদের প্রতিনিধি পেতে পারি এবং কলেজের স্বাভাবিক শিক্ষার পাশাপাশি নেতৃত্বের ক্ষেত্রও ফিরে পাই।’

ছাত্র সংসদ নিয়ে তিতুমীর কলেজের ছাত্র নেতারাও তাদের ভাবনা প্রকাশ করেছেন।

ছাত্র সংসদের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারবে—বলছেন তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি খাদেমুল ইসলাম সিয়াম।

তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চা এবং দলীয় আধিপত্যমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। ছাত্র সংসদের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারে। যেহেতু স্বৈরাচারী সরকারের কারণে দীর্ঘ সময় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি তাই তিতুমীর কলেজসহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা সময়ের দাবি। আমি সরকারের পাশাপাশি কলেজ প্রশাসনের প্রতিও আহ্বান জানাই, চলতি বছরের মধ্যেই তিতুমীর কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য।’

শিক্ষা ও শিক্ষা-সহায়ক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য—এমন অভিমত তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নোবেল ইসলাম সূর্যের।

তিনি মনে করেন, ‘নেতৃত্ব বিকাশ ও সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চায়ও ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিতুমীর কলেজে দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। আমরা এ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। তিতুমীর কলেজে ছাত্রদলের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে এবং দেশের যেকোনো সংকটকালীন মুহূর্তে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের তুলনায় তিতুমীর কলেজ ছাত্রদল সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্রদল সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা গতানুগতিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে কাজ করার চেষ্টা করছি। আমাদের প্রথম অঙ্গীকার হচ্ছে নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা। আমরা সরকার ও কলেজ প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, দ্রুত সময়ের মধ্যে তিতুমীর কলেজে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করা হোক। তবে নির্বাচন যেন ডাকসু ও জাকসুর মতো বিতর্কিত না হয়, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।’

ছাত্র সংসদ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায় ও সঠিক নেতৃত্ব গঠনের অন্যতম মাধ্যম— বলছেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের তিতুমীর কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির।

তিনি‌ বলেন, দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে, আর শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। অথচ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের সেতুবন্ধন তৈরিতে ছাত্র সংসদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তিনি বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু ছাত্র সংসদ নির্বাচন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী-বান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলবে এবং শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করবে। যেহেতু আমরা শিক্ষার্থীদের হয়ে কাজ করি, তাই শিক্ষার্থীদের ভাবনাই আমাদের মূল ভাবনা। সেই লক্ষ্যেই আমরা তিতুমীর কলেজ ছাত্র সংসদ (তিকসু) নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে সব রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি প্রশাসনের সাথেও ধারাবাহিক আলোচনা করে যাচ্ছি, যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও প্রশাসন নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নিরাপদ, সহিংসতামুক্ত এবং নিয়মিতভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করবে।’

Link copied!