বুধবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রহিম শেখ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ১১:৪৪ পিএম

ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

সংকটের বৃত্তে ব্যবসা-বিনিয়োগ

রহিম শেখ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ১১:৪৪ পিএম

সংকটের বৃত্তে ব্যবসা-বিনিয়োগ

রীতিমতো মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই নানান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। গ্যাসসংকটে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পে উৎপাদন। ব্যাংকের সুদহার বেড়ে হয়েছে ১৬ শতাংশ। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার বড় প্রভাব পড়েছে বেসরকারি বিনিয়োগে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি ঋণপত্র (এলসি) কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। সেই সঙ্গে রয়েছে ডলারসংকট। একই সময়ে বেসরকারি খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশের নিচে নেমেছে, যা ২২ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। কর্মতৎপরতা কমে যাওয়ায় শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে বেকার হচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক। এ ছাড়া শ্রম আইন সংস্কার নিয়েও ব্যবসায়ীদের মাঝে রয়েছে উদ্বেগ। হোঁচট খেয়েছে দেশের বিদেশি বিনিয়োগ। তিন মাসে কমেছে ৬২ শতাংশ। দেশীয় উদ্যোক্তারা সাহস পাচ্ছেন না নতুন বিনিয়োগে, পুরোনো বিনিয়োগও হুমকিতে। সব মিলিয়ে সংকটের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে ব্যবসা-বিনিয়োগ। এতে দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। 

জানা গেছে, সাধারণত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করে উদ্যোক্তারা নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন বা সম্প্রসারণ করে থাকেন। ফলে এই পণ্যটির আমদানি বাড়লে দেশে বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং সেরকারি খাতে ঋণের চাহিদা বাড়ে। আর বিনিয়োগ বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। ফলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে, যার প্রভাব পড়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে। ব্যাংকাররা জানান, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ আমলের ব্যবসায়ীদের অনেকেই আত্মগোপন করেছেন। আবার ডলার সরবরাহ পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি চলমান রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এতে কয়েক দফা নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে ব্যাংকঋণের সুদের হার বেড়েছে। এর প্রভাবে গ্রাহকপর্যায়ে সুদের হার ১৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এতে উদ্যোক্তারা ঋণের চাহিদা কম করছেন। আবার উচ্চ খেলাপি ঋণ ও তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোর দিক থেকেও বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে আগ্রহের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে। নতুন বিনিয়োগ কমার পেছনে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকে দায়ী করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু।

তিনি বলেন, নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে সবার আগে রাজনীতি ঠিক করতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা যদি থাকে, তাহলে বিনিয়োগ হবে না। আবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি ঠিক না হয়, তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্য চালানো অসম্ভব। এমনিতেই নানা সংকটে বিদ্যমান কারখানাগুলোই যেখানে চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা, সেখানে নতুন বিনিয়োগের সাহস কীভাবে দেখাবেন। 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৫ সালের বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশ প্রতিবেদন বাংলাদেশে বিনিয়োগে বাধার পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছে। এগুলো হচ্ছে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সীমিত অর্থায়ন, আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব, বিদেশি সংস্থাগুলোর জন্য অন্যায্য করের বোঝা ও দুর্নীতি। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা কমাতে ধীরে ধীরে অগ্রগতি অর্জন করা হয়েছে। যেমন বিদ্যুৎ পরিষেবা আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা রয়েছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগ এখনো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসন সংস্কারের কাজ শুরু করে, কিন্তু দৈনন্দিন নিয়ন্ত্রক দৃশ্যপটের বেশির ভাগই অপরিবর্তিত রয়েছে। শিল্প-কারখানার উদ্যোক্তারা বলেছেন, নানান সমস্যায় দেশে নতুন করে বিনিয়োগের আগ্রহ নেই।

শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে অর্থের উৎস না খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এ মুহূর্তে ব্যবসা-বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মধ্যে পড়ছি ব্যাংকিং নিয়ে। ব্যাংক সবচেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি করছে। আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বিলম্বিত হচ্ছে। এর পরের সমস্যা কাস্টমস নিয়ে। তারপর গ্যাস-বিদ্যুৎ, আইনশৃঙ্খলা। মোটা দাগে এ চার সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি বিনিয়োগসহায়ক হতে হবে। এখনো বিনিয়োগসহায়ক পরিবেশের অভাব আছে। শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে যা হচ্ছে, তাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না এটা নিশ্চিত। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য অপশন কম। বিদেশে বিনিয়োগের অনেক অপশন আছে। বিনিয়োগ যা করার করেছি, নতুন করে আর বিনিয়োগ করার চিন্তা-ভাবনা নেই।’ 

মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খোলা কমেছে 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খোলা হয়েছে মাত্র ১৭৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৪১ শতাংশ কম। একই সময়ে পণ্যটির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১৯৮ কোটি ৫১ লাখ ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৪২ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি কমেছিল ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের এলসি খোলা কমেছে ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। একই সময়ে এই পণ্যটির এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এ সময়ে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা সামান্য কমলেও নিষ্পত্তি বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। 

বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি সর্বনি¤œ পর্যায়ে 

উচ্চ সুদের হার আর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগে স্থবিরতা চলছে। তার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহে। গত আগস্ট মাসে দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ২২ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ স্তরে। ওই মাসে এই প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৬.৩৫ শতাংশে, যা গত জুলাইয়ে ছিল ৬.৫২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৩ সালের পর এটাই সবচেয়ে কম ঋণ প্রবৃদ্ধি। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাবসায়িক অনিশ্চয়তা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ি মুদ্রানীতির কারণে বিনিয়োগ চাহিদা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ বিতরণে আগ্রহ হারাচ্ছে, আবার উদ্যোক্তারাও নতুন বিনিয়োগে ঝুঁকি নিতে চান না।

তিন মাসে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৬২ শতাংশ

রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরেই এফডিআই মন্দা ভাব চলছিল। গত বছরের শেষ ছয় মাসে তা ৭১ শতাংশ কমে যায়। তবে হঠাৎ চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময় এফডিআই আসার হার বেড়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল-জুন সময়ে নিট এফডিআই এসেছে ৩০ কোটি ৩২ লাখ ডলার। তার আগের তিন মাস জানুয়ারি-মার্চ সময়ে নিট এফডিআই এসেছিল ৭৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সে অনুযায়ী তিন মাসে বিদেশি বিনিয়োগ ৬১ দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে। তবে বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ২৭ কোটি ২২ লাখ ডলার। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড পিস স্টাডিজের (সিএসপিএস) নির্বাহী পরিচালক কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিনিয়োগ কমার সুস্পষ্ট কারণ দেখছি না। তবে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যে ক্যারিশমা, সেটাও শেষ হয়ে আসছে। তাই বিনিয়োগকারীরা পরিবর্তিত পরিস্থিতি, নির্বাচন হয় কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন। পশ্চিমা দেশের যারা বিনিয়োগ করে, তারা একটা দেশের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি চায়। এখন যেহেতু একটা অস্থিরতা চলছে। তাই তারা পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করছে। এ কারণে বিনিয়োগ কমতে পারে। আবার এক প্রান্তিকে বাড়ে অন্য প্রান্তিকে কমে যায় এটাও স্বাভাবিক। প্রতি প্রান্তিকে বাড়বে এমন নয়।’

বস্তাবন্দি কালো টাকা বিনিয়োগ

গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার যে সুযোগ রাখা হয়েছিল, সমালোচনার মুখে চলতি অর্থবছরের বাজেটে তা বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, দেশে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। তবে কালো টাকার প্রকৃত পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের অর্থনীতিতে ১৯৭৩ সালে কালো টাকা ছিল জিডিপির ৭ শতাংশের সমপরিমাণ। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গড়ে কালো টাকার পরিমাণ ছিল জিডিপির ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১০ সালে তা সর্বোচ্চ প্রায় ৬৩ শতাংশে দাঁড়ায়। এনবিআর-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর ভাষ্য মতে, এখন পর্যন্ত আর্থিক ও প্রপার্টি খাতে ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থ বৈধ করেছেন মূলত প্রান্তিক ধনীরা। তাদের এসব অর্থবিত্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই ছিল। তা রক্ষা করার জন্যই সেটি বৈধ করার পথে হেঁটেছেন তারা। অন্যদিকে শিল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ না হওয়ার বড় একটি কারণ হলোÑ এ খাতের কালো টাকা মূলত দেশের বাইরে পাচার হয়ে যায়। তবে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে অর্থের উৎস না খোঁজার পরামর্শ ব্যবসায়ীদের। এতে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে বলে মনে করেন তারা। 

কর্মসংস্থানের অভাবে দেশে শিক্ষিত বেকার বাড়ছে

কর্মসংস্থানের অভাবে দেশে শিক্ষিত তরুণ বেকারের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। প্রতি তিনজন বেকারের একজন স্নাতক ডিগ্রিধারী। আর দুই বছরের বেশি বেকার এমন তরুণ-তরুণীদের মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি বাংলাদেশ শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সেখানে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি এবং বেশ সময় ধরে বেকার থাকার প্রবণতা দেখা গেছে। বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, বাংলাদেশে এখন বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ২৪ হাজার। এর মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা ৮ লাখ ৮৫ হাজার। সার্বিকভাবে কয়েক বছর ধরে দেশে বেকারের মোট সংখ্যা প্রায় অপরিবর্তিত। কিন্তু খারাপ খবর হলো, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। দেশে এখন প্রতি তিনজন বেকারের মধ্য একজন উচ্চশিক্ষিত। তাঁরা বিএ কিংবা এমএ ডিগ্রি নিয়েও শোভন চাকরি পাচ্ছেন না।

২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, ওই বছর চার লাখের মতো স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার ছিলেন। আট বছর পর এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ লাখ। এর মানে আট বছরের ব্যবধানে উচ্চশিক্ষিত বেকার দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই বয়সসীমার মধ্যে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ২ বছরের বেশি সময় ধরে বেকার থাকেন ১৭ শতাংশের বেশি তরুণ বেকার। এই হার অন্য ডিগ্রিধারীর চেয়ে বেশি। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ২ বছরের বেশি সময় বেকার থাকেন ৮ শতাংশের বেশি বেকার। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এমন তরুণদের মধ্যে বেকারের হার ১ শতাংশের মতো।

বন্ধ ৩৫৩ কারখানা, লক্ষাধিক বেকার

গত এক বছরে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। তাতে এক লাখ ১৯ হাজার ৮৪২ শ্রমিক বেকার হয়েছেন। তাদের অনেকে চাকরির জন্য ছুটতে ছুটতে শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে গ্রামে ফিরেছেন। বন্ধ কারখানার বেশির ভাগই তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার ও টেক্সটাইলশিল্পের। কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে গাজীপুরে ৭২টি কলকারখানা বন্ধ করা হয়েছে। কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে মাহমুদ জিন্স, ডার্ড কম্পোজিট, পলিকন লিমিটেড, টেক্সটিল ফ্যাশন, ক্লাসিক ফ্যাশন, লা-মুনি অ্যাপারেলসসহ বিভিন্ন কারখানা। কারখানা বন্ধ হওয়ায় জেলায় বেকার হয়েছেন প্রায় ৭৩ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ায় এক বছরে ২১৪টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে স্থায়ীভাবে ১২২টি ও অস্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে ৯২টি কারখানা। বন্ধ হওয়ায় এসব কারখানার প্রায় ৩১ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

গত এক বছরে চট্টগ্রামে বন্ধ হয়েছে ২১টি কারখানা। তাতে জাহাজ ভাঙাসহ বিভিন্ন কারখানার কমপক্ষে ১০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছেন। ২১ কারখানাসহ ২০০৫ সাল থেকে তৈরি পোশাক ও শিপ ব্রেকিং (জাহাজ ভাঙা শিল্প) এই দুটি প্রধান শিল্প খাতে ৪১৬ কারখানা একে একে বন্ধ হয়ে গেছে। তৈরি পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যানুসারে, ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে ৬৯৯টি নিবন্ধিত কারখানার মধ্যে ৬১০টি সচল ছিল, সেখানে এখন ৩৫০টি কারখানা চালু রয়েছে। বাকি ২৬০টি কারখানায় তালা ঝুলছে। এর মধ্যে গত বছর ১৪টি ও চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে সাতটি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। এর বাইরে এক বছরে একাধিক জাহাজভাঙা কারখানা বন্ধ এবং কয়েকটি কারখানায় বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কমানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে ছোট-বড় এক হাজার ৮৩৪টি পোশাক কারখানা রয়েছে। সূত্র জানায়, বিভিন্ন কারণে এক বছরে ২৬টি পোশাক কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে। এতে চাকরি হারিয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৪২ জন। বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে নিট গার্ডেন, একে ফ্যাশন লিমিটেড, লা মেইজন কচুর লিমিটেড, মোল্লা নিট ফ্যাশনসহ অন্তত আটটি বড় প্রতিষ্ঠান।

এদিকে কারখানাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার কারণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পোশাক কারখানার মধ্যে বেশির ভাগই বন্ধ হয়েছে আর্থিক সংকট এবং পর্যাপ্ত কাজের অভাবের কারণে। স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও গত এক বছরে নারায়ণগঞ্জের ১৯টি কারখানা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর দিচ্ছে ভিন্ন হিসাব। তাদের হিসাবে, নারায়ণগঞ্জে নিবন্ধনকৃত পোশাক কারখানা এক হাজার ১০টি। এর মধ্যে গত এক বছরে ৯টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!