ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে এবার লড়ছেন মোট ৪৩ জন প্রার্থী। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রচারও প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। যদিও প্রার্থীর সংখ্যা অনেক, তবে আলোচনায় রয়েছে গুটিকয়েক প্রার্থী, যারা বিভিন্ন সংগঠন ও প্যানেলের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ক্যাম্পাসজুড়ে বেশি নজর কেড়েছেন।
সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের আবিদুল ইসলাম খান, ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সাদিক কায়েম, বাগছাস সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আব্দুল কাদের, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের উমামা ফাতেমা, বামজোটের প্রতিরোধ পর্ষদের শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ প্যানেলের বিন ইয়ামীন মোল্লা, স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত সচেতন শিক্ষার্থী সংসদের ইয়াছিন আরাফাত এবং সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদের জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ।
ভিপি পদ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
ডাকসুর ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কারণ এই পদধারী হলেন মূলত ছাত্রসমাজের মুখপাত্র। তিনি ডাকসুর সভার সভাপতিত্ব করেন, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেন এবং শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যা নিয়ে প্রয়োজন হলে আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকেন। তার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সেতুবন্ধন রক্ষা করা।
এ ছাড়াও, ডাকসুর ভিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী সংস্থা- সিনেট ও সিন্ডিকেটের সদস্য হতে পারেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে। অর্থনৈতিক দিক থেকে এই পদে কোনো মাসিক বেতন না থাকলেও, ভিপি ও জিএস পদের জন্য এককালীন ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়, যা তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হয়।
কে জিততে পারে?
আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে কে জয়ী হবেন- এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে চলছে জোর আলোচনা। সরেজমিনে কথা বলে দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে বেশ কয়েকটি সংগঠনের নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক থাকায় তাদের প্রার্থীরা মাঠে দাপট দেখাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় এসব প্রার্থীর মধ্য থেকেই কেউ ভিপি পদে নির্বাচিত হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে এবারের নির্বাচনে মোট ৪৩ জন প্রার্থীই হেভিওয়েট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ কয়েকজন প্রার্থী উঠে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই এরইমধ্যে এসব প্রার্থীর পক্ষে মত প্রকাশ করছেন।
তবে আলোচনার বাইরেও ভোটের মাঠের বাস্তবতা আলাদা। অনেক শিক্ষার্থী মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত জয়ী হবেন সেই প্রার্থী, যিনি প্রকৃত অর্থে ছাত্রবান্ধব এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ঢাবির হয়ে যিনি কাজ করবেন, আমাদের পাশে থাকবেন, আমরা তাকেই ভোট দেব।’
থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘অনেক প্রার্থীই জনপ্রিয়তার কাতারে আছেন। তবে এবারের নির্বাচনে আমরা তাকেই বেছে নেব, যিনি আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়ে কাজ করবেন।’
সব মিলিয়ে বলা যায়, জনপ্রিয়তা, সংগঠনের প্রভাব ও মাঠের বাস্তবতা- তিনটি মিলে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত হবে কার মাথায় ওঠবে ভিপির মুকুট।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন