জাকসুতে প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে অনলাইনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন প্রার্থীরা

আসন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে এবারের নির্বাচনে প্রচারণার ধরণে এসেছে ভিন্নতা। প্রচলিত প্রচারণার পাশাপাশি প্রার্থীরা অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। অনলাইনে সাক্ষাৎকার, লাইভ, স্ট্যাটাস, রিলস ও প্রচারণা ভিডিও দিয়েই ভোটারদের মন জয় করতে চাইছেন তারা।

আগামী ১১ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা, টারজান পয়েন্ট, মুরাদ চত্বর, ক্যাফেটেরিয়া, টিএসসি, বিভিন্ন আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবনে প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি থাকলেও, প্রচারণার মূল ভরসা হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া।

জাকসু নির্বাচনী আচরণবিধিতে দেখা যায়- আবাসিক হল, একাডেমিক ভবন, গেট, অফিস, দেয়াল, গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোনো কাঠামোয় পোস্টার, লিফলেট বা দেয়াল লিখন নিষিদ্ধ। কেবলমাত্র নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত বোর্ডে পোস্টার বা লিফলেট লাগানোর অনুমতি রয়েছে। এছাড়া কোন ধরণের সভা-সমাবেশ, জনসমাগম, শোডাউন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে প্রচারণার সীমাবদ্ধতা ও ডিজিটাল যুগে শিক্ষার্থীদের অনলাইন উপস্থিতির কারণে প্রার্থীরা অনলাইন ক্যাম্পেইনে বেশি মনোযোগী হয়েছেন।

জাকসুতে ভোট বিক্রির অভিনব বিজ্ঞাপন!

বিস্তারিত পড়ুন

অনলাইন প্রচারণা সম্পর্কে ছাত্রদল মনোনীত এজিএস পদপ্রার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর  যেহেতু একটি পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। তাই অনেকেই একে অপরকে চেনে। তবুও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে সময়ের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এছাড়া কঠোর নির্বাচনী বিধিনিষেধ এর ফলে তা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে আমরা অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমকেও গুরুত্ব দিচ্ছি। যাতে আমরা একসাথে হাজারো শিক্ষার্থীর কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে পারি। 

ইসলামি ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী  সম্মিলন’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী  মাযহারুল ইসলাম বলেন,‘গত ২৯ আগষ্ট থেকে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা শুরু হয়েছে। আমরা একাডেমিক অনুষদগুলোর পাশাপাশি আবাসিক হলগুলোসহ  বিভিন্ন স্থান ও চত্বরগুলোতে শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রায় বারো হাজার ভোটারের কাছে আমাদের মতামতগুলো নিয়ে যাওয়া দুরূহ ব্যাপার সেহেতু অনলাইন কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌছানোর চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের সাথে প্রচারণার ক্ষেত্রে যে দূরত্ব সমাধানে প্রশাসনের কাছে একটা ডিসকাশনের ব্যবস্থা করতে বলেছি। আমরা অনলাইন এবং অফলাইন দুই মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের কাছে আমাদের জায়গায়টা পরিষ্কার করতে চাচ্ছি এবং তাদের চাওয়া পাওয়াগুলো তুলে আনতে পারি।’

এবিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী আবু তৌহিদ মো. সিয়াম বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে অভুৎত্থানের পিছনে অনলাইনের একটা বৃহৎ ভূমিকা রয়েছে। একজন পুরুষ প্রার্থী হিসেবে আমরা নারীদের হলগুলোতে গিয়ে প্রচারণা করতে পারিনা। সেক্ষেত্রে অনলাইনে প্রচারণার ফলে তাদের কাছে আমাদের মতামতগুলো নিয়ে পৌঁছানো যায়। আরেক বিষয় হচ্ছে এখন রাজনীতি থেকে শুরু করে সবকিছু অনলাইনের মাধ্যমে মতাদর্শ তৈরি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ জায়গা থেকেই আমরা অনলাইনে প্রচারণার করছি।’ 

এদিকে অন্যান্য প্যানেলগুলো থেকে অনলাইন প্রচারণায় পিছিয়ে রয়েছে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’। বিষয়টি নিয়ে প্যানেলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মনোনীত ইফরাত আমিন অক্ষর বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ প্যানেল নিয়ে প্রতি হলে হলে মুভমেন্ট করছি। সেই প্রেক্ষিতে আজ দিনেও প্রচারণা চালিয়েছি। আমরা যেহেতু স্বতন্ত্র প্রার্থীরা স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন নামক একটি  প্যানেলে নির্বাচন করেছি।  প্যানেল করে কাজ করায় আমরা সময় পাচ্ছি কম। এরপরেও আমরা চেষ্টা করছি সবকিছু গুছিয়ে নেয়া যায়। দ্রুতই আমরা ভালো কিছু করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।’

ডাকসুর তুলনায় জাকসুতে নারীদের অংশগ্রহণ দ্বিগুণ 

বিস্তারিত পড়ুন

অনলাইনে প্রচারণা নিয়ে ভোটাদের মধ্যে মিশ্র  প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছে। এক্ষেত্রে ভোটাররা বলছেন, আমরা যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় দেই, তাই প্রার্থীদের সেখানেই দেখতে ভালো লাগে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু অংশ বলছেন ভিন্নকথা। তাদের মতামত হচ্ছে, অনলাইনের পাশাপাশি  সরাসরি এসে সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে। যেহেতু তারা আমাদের সমস্যাবলী নিয়ে কাজ করবেন সেহেতু তাদেরকে আমাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে আমাদের সমস্যাবলী শুনতে হবে।