ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক। কেন্দ্রীয় ফলাফলের সঙ্গে হলভিত্তিক ভোটের গরমিল সামনে আসায় নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অংশগ্রহণকারী একাধিক প্রার্থী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই অভিযোগগুলো মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে আসে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
গত শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয়ভাবে ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায়, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে প্রার্থী মোহাম্মদ লানজু খান হলভিত্তিক ফলাফলে ১৫৭১ ভোট পেলেও কেন্দ্রীয় ফলাফলে তার ভোট দেখানো হয় ১৫৩১টি, অর্থাৎ ৪০ ভোট কম। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেন, ‘ধন্যবাদ ঢাবি প্রশাসনকে। আপনাদের চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি।’
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী সর্ব মিত্র চাকমা অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় ফলাফলে তার ভোট ৮৯৮৮ হলেও হলভিত্তিক হিসেবে তার প্রাপ্ত ভোট ৯৫৪৮। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘হতে পারে, বাতিল ভোটগুলোও হলভিত্তিক সংখ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আশা করি, এর সঠিক ব্যাখ্যা প্রশাসনের কাছে আছে।’
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে শিবির সমর্থিত প্রার্থী আসিফ আব্দুল্লাহর প্রকৃত ভোট ৯১০১ হলেও ফলাফলে ৪০ ভোট কমিয়ে ৯০৬১ দেখানো হয়েছে। একই পদে আসিফ জারদারীর প্রকৃত ভোট ২০৫০ হলেও দেখানো হয়েছে ২০০০। ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে মাজহারুল ইসলামের ৯৮৪৪ ভোটের জায়গায় ৯৩৪৪ উল্লেখ করা হয়, এর ফলে ৫০০ ভোটের গরমিল হয়।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী মোহাম্মদ সাকিব জানান, তার প্রকৃত ভোট ৩৯৬২ হলেও কেন্দ্রীয়ভাবে দেখানো হয়েছে ৩৯২২।
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের রায়কে সম্মান জানিয়ে নির্বাচন মেনে নিয়েছিলাম, তবে এই গরমিলের দালিলিক প্রমাণ রেখে দিলাম।’
অন্যদিকে, কিছু প্রার্থীর ক্ষেত্রে ভোট বেশি দেখানো হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এজিএস প্রার্থী আশরেফা খাতুনের প্রকৃত ভোট ৮৯০ হলেও ফলাফলে দেখানো হয়েছে ৯০০। সমাজসেবা সম্পাদক তাওহিদুল ইসলামের ২০৪৪ ভোট এক বাড়িয়ে ২০৪৫ দেখানো হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ফাতিন ইশরাকের প্রকৃত ভোট ২০১১ হলেও ফলাফলে ২০২১, আর একই পদে ফারহান লাবিবের ৪৮৬ ভোটকে বাড়িয়ে ৫২৬ দেখানো হয়।
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে মাহাথির খান নিনাদ ও রায়হানের ভোট যথাক্রমে ৬৯৪ ও ৩০৫ হলেও ফলাফলে দেখানো হয় ৭০৪ ও ৩১৫। সদস্য পদে আবির হাসানের ভোট ৩২২৬ হলেও ফলাফলে ৩৩২৬ এবং মনির হোসেনের প্রকৃত ভোট ৫৪৬ হলেও ৫৮২ দেখানো হয়।
এই সব গরমিলের প্রেক্ষিতে চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক জসীম উদ্দিন এক বিবৃতিতে জানান, ‘৮টি কেন্দ্রের ভোট যোগ করে সমন্বিত ফলাফল তৈরির সময় অবিরাম কাজ করতে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে মানবীয় ভুল হয়েছে। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকাশিত কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের ভিত্তিতে সমন্বিত ফলাফল সংশোধন করা হয়েছে, তবে এতে নির্বাচিতদের তালিকায় কোনো পরিবর্তন হয়নি।’
তবে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। অনেকেই দাবি তুলেছেন, ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন অনিয়ম বা গাফিলতি আর না ঘটে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন ব্যবস্থা সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য থাকে।

 
                             
                                    
 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন