ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫

খায়রুন নাহার লিপিসহ তিন শিক্ষক নেতাকে শোকজ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ০৮:৫৭ পিএম
প্রাথমিক শিক্ষক নেত্রী খায়রুন নাহার। ছবি- সংগৃহীত

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপিসহ তিন জন শিক্ষক নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। আন্দোলন প্রত্যাহার করার পরও পরীক্ষা বর্জন এবং উসকানিমূলক কার্যকলাপের অভিযোগে এই নোটিশ দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নুরুল হাসান স্বাক্ষরিত এই নোটিশটি জারি করা হয়। 

শোকজপ্রাপ্ত অন্য তিন শিক্ষক নেতা হলেন: বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শামছুদ্দীন মাসুদ, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাশেম এবং প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক মো. মাহবুবার রহমান। এদের প্রত্যেককে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে, কেন সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, ২০১৮ লঙ্ঘনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।

নোটিশে বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠন তাদের তিন দফা দাবি আদায়ের জন্য গত ৭ থেকে ১০ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ নভেম্বর অর্থসচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে শিক্ষক নেতাদের বৈঠক হয় এবং দাবি পূরণে সর্বাত্মক চেষ্টার আশ্বাস দেওয়া হয়। এই আশ্বাসে আন্দোলন সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

তবে কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে যে, পরবর্তীতে খায়রুন নাহার লিপিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য ও উসকানিমূলক ভিডিও প্রকাশ করতে থাকেন এবং উত্থাপিত দাবি পূরণে অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য সরকারকে চাপ দেন। সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, তারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদেরকে ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় প্রান্তিক পরীক্ষা গ্রহণে বিরত থাকার আহ্বান জানান। 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে কয়েক দফা আলোচনা এবং দাবি পূরণের আন্তরিক প্রচেষ্টার আশ্বাস সত্ত্বেও এই শিক্ষকরা পরীক্ষাসহ বিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য প্রচার চালিয়ে যান। ফলস্বরূপ, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু সংখ্যক শিক্ষক কর্মবিরতিও পালন করেন, যা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কর্তৃপক্ষ এই আচরণকে সরকারি কর্মচারীর জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।


প্রাথমিক শিক্ষকদের মূল তিন দফা দাবি হলো:

১. সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে নির্ধারণ (বর্তমানে তারা ১৩তম গ্রেডে বেতন পান, যেখানে প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন। সরকার আপাতত ১১তম গ্রেড দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে, তবে তা কার্যকর হয়নি)।

২. ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতার অবসান।

৩. সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।

শিক্ষকদের পাল্টা কর্মসূচি এবং চরম সতর্কতা

শোকজ পাওয়ার প্রতিবাদে এবং তাদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের সমর্থনে শিক্ষক নেতারা কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষক নেতা মো. শামছুদ্দীন মাসুদ জানিয়েছেন, বুধবার (৩ ডিসেম্বর) থেকে তারা নতুন কর্মসূচি শুরু করবেন, যার অংশ হিসেবে শিক্ষকরা উপজেলা বা থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) অফিসের সামনে অবস্থান নেবেন।

অন্যদিকে, প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আরেকাংশ বুধবারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) থেকে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে 'তালাবদ্ধ' কর্মসূচি শুরু করার হুমকি দিয়েছেন। অর্থাৎ, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখবেন।

এমতাবস্থায়, শিক্ষক নেতা খায়রুন নাহার লিপি, যিনি বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং ২০১৯ সালের জাতীয় শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি শিক্ষক সমাজের মাঝে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। আন্দোলনের সময় পুলিশের হামলায় তিনি আহতও হয়েছিলেন।