বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল ইসলাম রাজু, রাবি

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ১০:২৩ পিএম

রাকসু নির্বাচনে ‘শক্ত অবস্থান নেই’ ছাত্রদলের

মাইনুল ইসলাম রাজু, রাবি

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ১০:২৩ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও ছাত্রদলের লোগো। ছবি- সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও ছাত্রদলের লোগো। ছবি- সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে নির্বাচনকেন্দ্রীক রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে। তবে ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং প্রস্তুতির ঘাটতির কারণে সংগঠনটি এখনো নির্বাচনের মাঠে ‘শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারেনি’।

এ ছাড়া সভাপতি-সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার কারণে তারা নির্বাচনকে ঘিরে দোটানায় রয়েছেন।

গত শনিবার শাখা ছাত্রদলের ১১৩ সদস্যবিশিষ্ট ‘আংশিক পূর্ণাঙ্গ’ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রদের ১১টি আবাসিক হলে আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ছাত্রদলের শাখার একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, রাকসুর আগে নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্যই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে এবং হল কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। তবে গত ২৯ জুলাই শাখা ছাত্রদলের আংশিক কমিটির ১১ সদস্যের মধ্যে ৭ জনের নিয়মিত ‘ছাত্রত্ব’ না থাকায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না।

ফলে সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে রয়েছে। ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী মনে করছেন, কিছুটা সময় পেলে তারা সাংগঠনিক শক্তি বাড়িয়ে নির্বাচনে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করতে পারবেন।

ছাত্রদল নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল হিসেবে অংশ নিতে চায়, যার সম্ভাব্য নাম হতে পারে ‘ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল’। নতুন কমিটি হওয়ায় নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে সক্রিয় থাকলেও পুরোপুরি প্রস্তুতির অভাবে তাদের অবস্থান এখনো দুর্বল।

হল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হলে তারা আরও শক্তিশালী হতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। শাখা ছাত্রদল থেকে হলের নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিন আগেই হল সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হলগুলোতে অবস্থানরত নেতারা এর মধ্যেই জনসংযোগ শুরু করেছেন।

দলটির তরুণ নেতাকর্মীরা বলছেন, রাকসু নিয়ে সিনিয়র নেতাদের কিছুটা অনীহা থাকতে পারে, কারণ সুপার কমিটির ১১ জনের মধ্যে ৭ জনের ছাত্রত্ব নেই। তবে দলের কর্মীরা চায়, নির্বাচন হোক এবং দলের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করতে চান তারা।

ছাত্রদলের তিন দাবি: নির্বাচন পেছানোর কৌশল?

রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই ছাত্রদল তিনটি দাবি জানিয়ে আসছে। এই দাবিগুলো আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাকসু নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না বলে বিভিন্ন সময় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। দাবিগুলো মেনে নির্বাচন আয়োজন করলে ছাত্রদলের কোনো সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন তারা।

ছাত্রদলের তিনটি দাবি হলো:

  • আবাসিক হলে ভোটকেন্দ্র থাকতে পারবে না; ভোটকেন্দ্র অ্যাকাডেমিক ভবনে স্থানান্তর করতে হবে।
  • রাকসুর কোষাধ্যক্ষ ও একাধিক হলের প্রাধ্যক্ষ জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত, তাদের উপস্থিতিতে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। সকলের জন্য নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
  • রাকসু নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের দোসর শিক্ষকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এই দাবিগুলোর মধ্যে বিচারের দাবি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তাই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এটি নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার একটি কৌশল। ছাত্রদলের নেতারা বলছেন, যদি দাবি না মানা হয়, তাহলে তারা আন্দোলনে নামবেন।

এ ছাড়া অভিযোগ করছেন যে ছাত্রলীগ নেতাদের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় রয়েছে, যদিও নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে চূড়ান্ত তালিকায় তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে।

ছাত্রদলের ১১ জনের সুপার কমিটিতে রাকসুর ভোটার চারজন

দীর্ঘ চার বছর পর শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয় ২৯ জুলাই। রাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫-এর খসড়া ভোটার তালিকায় ছাত্রদলের সুপার কমিটির ১১ সদস্যের মধ্যে মাত্র ৪ জন ভোটার হিসেবে নাম থাকায় অংশ নিতে পারবেন। বাকি ৭ জনের ছাত্রত্ব না থাকায় তারা ভোটার গণ্য হননি।

নির্বাচনের তালিকায় নাম থাকা চার জন নেতা হলেন: সহসভাপতি জান্নাতুন নাঈম তুহিনা (লোকপ্রশাসন, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ); যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহিন বিশ্বাস এষা (সংগীত, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ); সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিঠু (ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) এবং দপ্তর সম্পাদক নাফিউল জীবন (আরবি, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ)।

বাকি ৭ জন নেতা হলেন: সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী, সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল, সিনিয়র সহসভাপতি সাকিলুর রহমান সোহাগ, সহসভাপতি মেহেদী হাসান, সাবিহা আলম মুন্নি, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহের রহমান।

নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে আছেন

রাকসুতে ছাত্রদলের প্যানেলে সহসভাপতির (ভিপি) দৌড়ে এগিয়ে আছেন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিঠু। কারণ মিঠু ছাড়া সিনিয়র নেতাদের কেউই নিয়মিত ছাত্রত্ব রাখেননি। এ ছাড়া দপ্তর সম্পাদক নাফিউল জীবন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিন বিশ্বাস এষা ও জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) রাবি শাখার সদস্য সচিব গাজী ফেরদৌস হাসান প্যানেলে শীর্ষ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন।

ছাত্রদল প্রস্তাব করেছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর মতো এমফিল শিক্ষার্থীদেরও নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হোক। তবে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন জানান, এমফিলে ভর্তি হওয়ার জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন ব্যতীত অন্য কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না, আর ওই শিক্ষার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক নন।

ছাত্রদলের নির্বাচনী সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

রাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ২৫,১২৭ জন, যার মধ্যে ছাত্র ভোটার ১৫,৪৪০ এবং ছাত্রী ভোটার ৯,৬৮৭। মোট ভোটারের ৬১ শতাংশ ছাত্র ও ৩৮ শতাংশ ছাত্রী।

ছাত্রদলের নেতারা মনে করছেন, তাদের জাতীয়তাবাদী আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের অবস্থান সাধারণ শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন শিক্ষার্থীরাও আছেন যাদের পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত, তবে শাখা ছাত্রদল এখনো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। রাকসুর প্যানেল ঘোষণা হলে যোগাযোগ স্থাপিত হবে এবং জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে।

শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘রাকসু নিয়ে আমাদের যে দাবিগুলো ছিল তা প্রশাসন আমলে নেয়নি। আমরা চাই প্রশাসন নিরপেক্ষ থেকে আমাদের আস্থা অর্জন করুক। ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনের যৌক্তিক দাবি মেনে নির্বাচন করুক।’

তিনি বলেন, ‘তড়িঘড়ি করে নির্বাচন না করে সবকিছু সুষ্ঠুভাবে অনুসরণ করে নির্বাচন হওয়া উচিত। না হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই প্রহসনমূলক নির্বাচন মেনে নেবে না।’

নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘যদি আমাদের দাবি না মানা হয়, তাহলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে দাবি আদায় করব। প্যানেল বিষয়ে, ছাত্রদল এককভাবে প্যানেল দেবে, তবে প্রয়োজনে অন্যদেরও দলে নিতে পারি। নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আমরা আশাবাদী।’

রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ছাত্রদল যে পক্ষপাতীত্বের অভিযোগ তুলেছে তা সত্য নয়। বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি শিক্ষকরাই প্রশাসনের দায়িত্বে থাকবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দায়িত্বশীল কেউই নির্বাচনের পরিপন্থি কোনো কাজ করেননি। যদি কোনো হলে কোনো সংগঠন প্রভাব বিস্তার করতে চায়, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

Link copied!