সমালোচনার মুখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের সময় এগিয়ে ২৫ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ২৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়ে। তবে নির্ধারিত তারিখটি শুভষষ্ঠী ও দুইটি ছুটির মাঝামাঝি দিনে পড়ায় ক্যাম্পাস জুড়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
যার ফলে বুধবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় জরুরি সভায় বসে নির্বাচন কমিশন। সভায় নির্বাচন নতুন এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তারা। পরে রাত ৯টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করে।
বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, ‘হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাষষ্ঠী বিবেচনা করে নির্বাচনের তারিখ ২৫ তারিখে পুনর্নিধারণ করা হলো।’
এর আগে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর বেশকিছু দাবি ও ছাত্রদলের দুই মাস সময় চাওয়ার ‘অনুরোধের’ পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) ও আজ দুই দফা নির্বাচন কমিশনের জরুরি সভা বসে।
গতকাল সভা শেষে বিকেল পৌঁনে ৫টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় ৫ দিন বৃদ্ধিসহ তিনটি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় বাড়ানো ও নির্বাচন পেছানোর আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়করা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান।
যার কারণে আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জরুরি সভায় বসে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের নতুন সময় জানান তাঁরা। নতুন তারিখ শুক্রবার ও শনিবারের ছুটি ও ৩০ থেকে শুরু হওয়া দুর্গাপূজার ছুটির মাঝামাঝি হওয়ায় তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ফলে আজ সন্ধ্যা ৭ আরেকটি সভায় বসে কমিশন। সভায় নির্বাচনের তারিখ পুননির্ধারণ করে ২৫ সেপ্টেম্বর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্ভাব্য ভিপি প্রার্থী মাহমুদুল হাসান মিঠু বলেন, এই নির্বাচন কমিশন হচ্ছে একটি অপেশাদার নির্বাচন কমিশন। তারা সকালে এক সিদ্ধান্ত দেয়, বিকালে আরেক সিদ্ধান্ত দেয়। তারা ভেবেচিন্তে কোন কাজ করে না। তারপরও বিষয়টি স্বস্তিদায়ক যে তারা হিন্দু শিক্ষার্থীদের কথাটি মাথায় রেখে নির্বাচনে এগিয়ে এনেছে।
তবে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা হলেও এই পরিবর্তিত দিন নিয়েও সন্তুষ্ট নয় ছাত্রশিবির। শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, আমরা চাই পূর্ব নির্ধারিত ১৫ সেপ্টেম্বরেই নির্বাচন হোক। নির্বাচন এক দিনও পেছানো যাবে না।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, হিন্দু শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে নির্বাচনের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে, এটি ঠিক আছে। কিন্তু নির্বাচন পূর্ব নির্ধারিত ডেইট থেকে ১০ দিন পেছানো হয়েছে। এটা আমরা মেনে নিচ্ছি না। নির্বাচন কমিশনের যদি সময়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে তারা সর্বোচ্চ পাঁচ দিন বাড়াতে পারতো কিন্তু ১০ দিন কোন ভাবেই কাম্য নয়। নির্বাচন নির্ধারিত দিনেই হতে হবে।
ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে প্রশাসন নির্বাচন তিন দিনে গিয়ে এনেছে। বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই। আর প্রশাসনের যে কাজগুলো বাকি আছে, এগুলো আশা করি তারা দশ দিনের মধ্যে শেষ করে একটা সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আমাদেরকে উপহার দিবেন।
তফসিল পুনর্বিন্যাস
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের তফসিল পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি জানানো হয়। এর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র সংগঠন, সনাতনী শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। এই সমালোচনার মুখে নির্বাচন কমিশন জরুরি সভা ডাকে সন্ধ্যা সাতটায়। এরপর নির্বাচনের তারিখ তিন দিন এগিয়ে আনা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য পূর্বনির্ধারিত তফসিলের সময় যথেষ্ট হচ্ছে না। আবাসিক হল থেকে ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর, ভোটার তালিকায় ছবি সংযুক্তি এবং ডোপ টেস্টের জন্য আমাদের সময় প্রয়োজন। নির্বাচনী সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে ৩১ আগস্ট বিকেল ৫টা পর্যন্ত, মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে ১ থেকে ৪ এবং ৭ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর, প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে ১১ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ১৫ সেপ্টেম্বর এবং প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একাডেমিক ভবনে ভোটগ্রহণ হবে এবং একই দিন গণনা শেষে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
মনোনয়নপত্র নিলেন আরও দুইজন
বুধবার আরও দুইজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে একজন এবং সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে একজন মনোনয়নপত্র নেন।