দীর্ঘ ৩৩ বছর পর কড়া নিরাপত্তায় চলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নানা শঙ্কা কাটিয়ে জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ভোটের কার্যক্রম শেষ করতে কড়া নিরাপত্তা জোরদার করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলোতে দেখা যায়, প্রতিটি প্রবেশপথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য, আনসার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে তারা দায়িত্ব পালন করছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সবার আইডি কার্ড যাচাই করে এবং অনুমোদিত ব্যক্তি বা যানবাহনকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হল কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে।
ঢাকা জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফটকসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশের ১ হাজার ৫০০ সদস্য, ৭ প্লাটুন বিজিবি, ৪ প্লাটুন আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। তবে তাঁদের অধিকাংশই ভোট ক্যাম্পাসের কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করছেন।
ভোটকেন্দ্রগুলোতে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। কেন্দ্রের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে প্রায় ৮০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এসব সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে কেন্দ্রের পরিবেশ নজরদারি করা হচ্ছে। শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি টিম, প্রক্টরিয়াল বডি ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পুরো ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে পুলিশি নিরাপত্তা রয়েছে, মোবাইল পেট্রোল, বিশেষায়িত টিম, বোম এক্সপোজাল ইউনিট, সোয়াত টিম, ডিবি, সিসিটিভি মনিটরিং সেল, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স রয়েছে। র্যাব ও বিজিবির সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।
জাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, জাকসু নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানাবিধ পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে এখন পর্যন্ত কোনো ঝুঁকি নেই। তবে অন্যান্য ফটকের তুলনায় গেরুয়া ফটক দিয়ে বাইরের লোকজন ঢোকার চেষ্টা করতে পারে। এ কারণে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বেশি রাখা হয়েছে।
জাকসুতে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৮৯৭। ছাত্রী ভোটার ৫ হাজার ৭২৮ জন, ছাত্র ভোটার ৬ হাজার ১৫ জন। জাকসুর মোট ২৫টি পদের বিপরীতে ১৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া ২১টি হল সংসদে ১৫টি করে মোট ৩১৫টি পদের বিপরীতে প্রার্থী রয়েছে ৪৪৩ জন।
নির্বাচনে মোট ৮টি প্যানেল ছাড়াও অনেক প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ৮টি প্যানেলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুর রশিদ জিতুর নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্যানেল ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ এবং ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ এই পাঁচটি প্যানেলের মধ্যে।
ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। ২১টি ভোটকেন্দ্রে বুথ থাকবে ২২৪টি। ২১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭ জন পোলিং কর্মকর্তা ও ৬৭ জন সহকারী পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।