কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তনের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আর মাত্র দুইদিন বাকি। আজ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) মধ্যরাতে শেষ হবে প্রার্থীদের প্রচার কার্যক্রম। আচরণবিধি অনুযায়ী, রাত ১২টার পর কোনো প্রার্থী আর প্রচারণা চালাতে পারবেন না।
ভোটার ও প্রার্থীর সংখ্যা
এবারের রাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। ২৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ জন প্রার্থী, সিনেট প্রতিনিধি পদে ৫৮ জন এবং হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ৫৯৭ জন প্রার্থী।
তবে সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী, রাকসুর ২৩ পদে মোট প্রার্থী ২৫৫ জন। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ১৯, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৪, সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ১৬ জন প্রার্থী রয়েছেন।
এছাড়া ক্রীড়া সম্পাদক পদে ৯, সহকারী সম্পাদক ৬, সংস্কৃতি সম্পাদক ১১, সহকারী ৯, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ৭, সহকারী ৮, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ১৩, সহকারী ৮, মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক ১০, সহকারী ১০, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ১০, সহকারী ৬, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ১২ এবং সহকারী সম্পাদক ১৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রাকসুর চার নির্বাহী সদস্য পদে লড়ছেন ৫৫ জন প্রার্থী। মোট ৭টি মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।
প্রচারের অভিনব কৌশল
শেষ সময়ে প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, চত্বর ও আবাসিক হলে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রচারে অভিনব কৌশল হিসেবে কেউ টাকার আদলে লিফলেট, কেউ দলিল বা পত্রিকার আকারে পোস্টার ব্যবহার করছেন। আবার কেউ গান গেয়ে বা নবাব সিরাজউদ্দৌলা সাজে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করছেন।
কারো হাতে কার্টুন চরিত্র, পান্ডা বা আলাদীনের প্রদীপ- সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে সরব পুরো ক্যাম্পাস। শুধু অফলাইনে নয়, অনলাইনেও চলছে সমান তৎপরতা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট, ভিডিও, রিলস ও প্রচারমূলক গান দিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন প্রার্থীরা।
ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও মতামত
প্রচার ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ থাকলেও কিছু প্রার্থী অর্থের প্রভাবের অভিযোগ তুলেছেন।
গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, কিন্তু প্রচারে অর্থের ছড়াছড়ি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করেছে।’
অন্যদিকে ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের প্রার্থীরা ইতিবাচক পরিবেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বড় কোনো অভিযোগ ছাড়াই উৎসবমুখর প্রচার হয়েছে, শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।’
ভোটারদের প্রত্যাশা
প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীরা রাকসু নির্বাচনের প্রচারে নতুন অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন। ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘নবীনবরণে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীদের প্রচার আমাদের জন্য বাড়তি আনন্দের ছিল।’
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রনি আহমেদ বলেন, ‘রাকসু আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। আশা করব, নির্বাচনের পরেও প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবেন।’
অন্যদিকে মেহেরচণ্ডী এলাকার মেসে থাকা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রার্থীদের আন্তরিকতা ভালো লেগেছে, তবে দূরে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছেও যেন তারা পৌঁছায়।’
নিরাপত্তা জোরদার
নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে একাধিক সভা করেছে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, নির্বাচনে দুই হাজার পুলিশ, ছয় প্লাটুন বিজিবি এবং ১২ প্লাটুন র্যাব মোতায়েন থাকবে।
পুলিশের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ টিমও দায়িত্ব পালন করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যাতে কোনো বহিরাগত প্রবেশ না করে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে, সেজন্য তল্লাশি ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
ভোটগ্রহণ ও সময়সূচি
২৮ জুলাই তফসিল ঘোষণার পর তিন দফা ভোট স্থগিত হয়। সর্বশেষ সময়সূচি অনুযায়ী, ১৬ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নয়টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে।
প্রতিটি ভোটার রাকসুর ২৩টি, হল সংসদের ১৫টি এবং সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে মোট ৪৩টি ভোট দেবেন। ভোট দিতে সময় পাবেন সর্বোচ্চ ১০ মিনিট।
ভোটগ্রহণ শেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।