শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) একাডেমিক ভবনের সামনে বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) এর নির্বাচনী প্রচারণার ব্যানার ঝুলিয়ে সমাবেশ করাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রোববার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থী ও নেটিজেনরা ব্যাপক সমালোচনা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এম মহবুবউজ্জামান একাডেমিক ভবনে ব্যানার ঝুলিয়ে ভবনটির সামনেই সমাবেশ করেন ঢাকা-১২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাইফুল আলম নীরব। ব্যানারটিতে মনোনীত দলীয় প্রার্থীসহ শীর্ষ নেতাদের ছবি ও প্রচারণামূলক বার্তা দেখা যায়। এ ঘটনাকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের পরিপন্থি দাবি করে বলছেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ে রাজনৈতিক দলের সমাবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
এক ছাত্র জাহিদ হাসান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, বিএনপির বাপের ক্যাম্পাস কি এইটা? ভিসি সমালোচনা নিতে পারেন না। সমালোচনা করলেই আনফ্রেন্ড করে দেন। আর এই রকম কাজ তিনি করতেই থাকেন।
আরেক শিক্ষার্থী মো. শান্ত লিখেছেন, ক্যাম্পাস কোনো নির্বাচনি প্রচারণার জায়গা নয়, প্রশাসন কিভাবে এতটা নির্লজ্জ আর পাচাটা হয় আমি জানি না। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পোস্টার লাগাচ্ছে, প্রোগ্রাম করতেছে রাজনৈতিক ব্যানারে। অনুমতি ছাড়া তো তারা এগুলো করতে পারে না। যেই ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষেধ সেখানে বাইরের কিছু মানুষ এসে নাকি নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছে। অদ্ভুত এক উটের পিঠে চলছে আমার ক্যাম্পাস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর আমরা যে অরাজনৈতিক ভিসিকে পেয়েছিলাম, সেই ভিসি এখন আর নেই। তিনি একটি রাজনৈতিক দলের ভিসি হয়ে গিয়েছেন। এখন রাজনৈতিক সমাবেশেও দেখা যায়। তিনি তার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেন নাই।
অ্যানিম্যাল সাইন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কেউ ক্যাম্পাসে সমাবেশ করতে পারে না। প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই বিএনপি ক্যাম্পাসে সমাবেশ করেছে, সেটা শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্বেগজনক। আমরা আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেখেছি বিগত প্রশাসন রাজনৈতিক কোনো সমাবেশ ক্যাম্পাসে মুক্ত পরিবেশে হতে দেয়নি। কিন্তু এই প্রশাসন জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে সেটা করতে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখেছি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পরিচয়ের থেকে একটি রাজনৈতিক দলের কোনো একটি সংগঠনের সভাপতি পরিচয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক।
কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী বলেন, আমাদের মেয়েদের হলে রাত ৮টায় গেট বন্ধ হয়ে যায়। এর ঠিক আগে টিউশন থেকে হলে ফেরার সময় হল-সংলগ্ন এলাকায় বহিরাগতদের নিয়ে রাজনৈতিক সমাবেশ দেখতে পাই। তখন সেখানে চলাচল করা অস্বস্তি অনুভব করি। তিনি আরও বলেন, হল-সংলগ্ন এলাকায় বহিরাগতদের ভিড় আমাদের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত করে। এ ধরনের অবস্থায় নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে স্বভাবতই উদ্বেগ তৈরি হয়। ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের উপস্থিতি সবসময়ই নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষত মেয়েদের জন্য। তিনি প্রশাসনকে উদ্দেশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যেন শিক্ষার জায়গা থাকে—বহিরাগতদের রাজনৈতিক সমাবেশের কারণে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়কে বহিরাগতদের প্রভাবমুক্ত রাখা সবার দায়িত্ব। একাডেমিক ভবনের মতো শিক্ষার মূল স্থানে দলীয় প্রচারণা ও রাজনৈতিক সমাবেশ ক্যাম্পাসের পরিবেশকে অশান্ত করতে পারে বলে শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন