ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫

এসএসসি-এইচএসসিতে ‘সহানুভূতির নম্বর’ বাতিল

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৫, ১১:১০ এএম
পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীরা। ছবি- সংগৃহীত

দীর্ঘদিন ধরে চলা এসএসসি ও এইচএসসি পাবলিক পরীক্ষায় খাতা মূল্যায়নে ‘সহানুভূতির নম্বর’ দেওয়ার প্রথা থেকে এবার সরে আসছে সরকার। অপ্রাসঙ্গিক উত্তর, অংশিক সঠিক লেখা কিংবা একাধিক ভুল থাকা সত্ত্বেও নম্বর প্রদান-এমন অনিয়মের অবসান ঘটাতে যাচ্ছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চলতি বছর থেকেই পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে ‘বাস্তবভিত্তিক ও নির্ভুল’ পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। এতে করে পাসের হার ও সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ ৫ পাওয়ার হার কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও, শিক্ষাবিদরা এটিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

একজন প্রধান পরীক্ষক উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘প্রশ্ন ছিল, ‘হাজী মুহম্মদ মুহসীনকে কেন দানবীর বলা হয়?’ -উত্তরে শিক্ষার্থী লিখেছে, ‘তিনি দানব ও বীর ছিলেন, তাই তাকে দানবীর বলা হয়।’ আশ্চর্যের বিষয়, এমন উত্তরের জন্যও পরীক্ষক নম্বর দিয়েছেন।’

এমন উদার মূল্যায়নের সংস্কৃতি শিক্ষার গুণগত মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে দীর্ঘদিন। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নম্বরের উদারতা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিখনের চেয়ে নম্বর অর্জনের প্রতিযোগিতায় অভ্যস্ত করেছে।

২০০১ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর পর থেকে দেশে পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়ার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। যেখানে প্রথম বছর পাসের হার ছিল মাত্র ৩৫.৮১ শতাংশ, সেখানে ২০২১ সালে তা দাঁড়ায় ৯৩.৫৮ শতাংশে। একইভাবে ২০০১ সালে মাত্র ৭৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেলেও, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জনে।

শিক্ষাবিদদের মতে, এ উল্লম্ফনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে খাতা মূল্যায়নে উদারনীতি।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘জিপিএ ৫ পেলেও যদি কেউ ভালো কলেজে ভর্তি হতে না পারে, তাহলে সেই ফলাফল মূল্যহীন। তাই আমরা সংখ্যার চেয়ে মানের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।’

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘কঠোরতা নয়, বাস্তবভিত্তিক ও নির্ভুল মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ভালো শিক্ষার্থী তৈরি করাই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য।’

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নুরুল হক বলেন, উদারনীতি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। এখন শিক্ষকদের বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীর প্রাপ্য নম্বরই তাকে দিতে হবে-এর বাইরে নয়।

পাসের হারে ঊর্ধ্বগতি

২০০১ সালে গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই বছর পাসের হার ছিল ৩৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। দুই দশকের ব্যবধানে ২০২১ সালে তা ৯৩.৫৮ শতাংশে ওঠে। এর পেছনে প্রধানত উদারনীতিকেই কারণ মনে করা হয়। বোর্ডভিত্তিক ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬, ২০২১ ও ২০২২ সালে পাসের হার ছিল যথাক্রমে ৮৯.০৩ শতাংশ, ৯১.৩৪, ৮৮.২৯, ৯৩.৫৮ ও ৮৭.৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ ৯৩.৫৮ শতাংশ পাসের হার রেকর্ড করা হয়। বিগত এক দশকের মধ্যে ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল সর্বনিম্ন, ৭৭.৭৭ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১০, ২০১২ ও ২০১৯ সালেও পাসের হার ৮০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল।

জিপিএ-৫-এর উল্লম্ফন

বিগত দুই দশকের পরিসংখ্যান বলছে, সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ ৫-এর উল্লম্ফন ঘটেছে। ২০০১ সালে যেখানে মাত্র ৭৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছিল, সেখানে ২০২২ সালে এই সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জনে।

গত দেড় দশকে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে একাধিক পরিবর্তন এসেছে। ২০০৭ সালে চালু হওয়া স্কুলভিত্তিক মূল্যায়ন (এসবিএ) দুর্নীতির কারণে এক বছরের মাথায় স্থগিত হয়। ২০২২ সালে ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু হলেও বিতর্কের মুখে তা বাতিল করা হয়।