সোমবার, ০২ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ০৯:৫০ পিএম

মাস্টারক্লাসে ঋতুপর্ণ

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ০৯:৫০ পিএম

ঋতুপর্ণ ঘোষ।     ছবি- সংগৃহীত

ঋতুপর্ণ ঘোষ। ছবি- সংগৃহীত

‘আমি কোনো নির্দিষ্ট লেবেলে বিশ্বাস করি না। সিনেমা একটা অনুভব। যেটা মনে হয় সত্য, সেটাই আমার সিনেমা।’-এ কথাটি বলেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। তিনি শুধুই চলচ্চিত্র নির্মাতা নন, ছিলেন কবি, এক প্রশ্নবিদ্ধ সমাজের শিল্প-নির্মাতা, একজন কণ্ঠস্বর- যার কণ্ঠে সাহসের র্বাণী লেগে থাকতো।

ঋতুপর্ণ ঘোষ, বাংলা সিনেমার সেই সংবেদনশীল নির্মাতা, যার ক্যামেরা কখনো প্রশ্ন করেছে, কখনো উত্তর দিয়েছে, আবার কখনো বা এক জটিল নিস্তব্ধতার মধ্য দিয়ে শুধুই গল্প বলে গেছে। এক দশক পেরিয়ে গেছে তার মৃত্যু। কিন্তু তার রেখে যাওয়া শিল্প এখনো সময়ের মেধাবী শ্রোতাদের মনে আলোড়ন তোলে।

১৯৬৩ সালের ৩১ আগস্ট কলকাতায় জন্ম নেয় ঋতুপর্ণ ঘোষ। শুরুতে বিজ্ঞাপন জগতের সৃজনশীল দুনিয়ায় পা রাখেন। কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই তার শিল্পীসত্তা বৃহত্তর ক্যানভাস খুঁজে নেয় চলচ্চিত্রে।

প্রথম ছবি ‘হীরের আংটি’(১৯৯৪)- এক পারিবারিক শিশুতোষ চলচ্চিত্র হলেও সত্যিকারের প্রভাব পড়ে ‘উনিশে এপ্রিল’ (১৯৯৪) এই সিনেমার মাধ্যমে। মা-মেয়ের সম্পর্ককে ঘিরে নির্মিত এই মনস্তাত্ত্বিক সিনেমা বাংলা সিনেমায় জগতে এক নতুন ধারার উন্মোচন ঘটায়। তিনি বুঝিয়ে দেন, ক্যামেরা দিয়ে সম্পর্কের গভীরতা ও অন্ধকারও তুলে ধরা যায়।

ঋতু এরপর তৈরি করেন- দহন, বাড়িওয়ালি, চোখের বালি, অন্তরমহল, সব চরিত্র কাল্পনিক, আবোহমান, আরোক্তি, চিত্রাঙ্গদার মতো সিনেমাগুলো। তার প্রতিটি চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে একেকটি অন্তর্জাগতিক পরীক্ষা। নারীসত্তা, যৌনতা, একাকীত্ব, সামাজিক সংকট- প্রতিটি বিষয় তার কণ্ঠে যেন পায় নান্দনিক প্রতিবাদের ভাষা।

ঋতুপর্ণ ঘোষ বারবার নারীর অভিজ্ঞতা, অন্তর্দ্বন্দ্ব ও সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে তার সংঘাতকে তুলে এনেছেন। ‘উনিশে এপ্রিল’–এ বিষণ্ণতার নেপথ্যে থাকা শৈশব, ‘চোখের বালি’-তে বেদনার অস্থিরতা, কিংবা ‘অন্তরমহল’-এ নারী শরীরের ওপর পুরুষতান্ত্রিক দখলদারিত্ব- সবকিছুতেই ঋতুপর্ণ ছিলেন স্পষ্ট, সাহসী এবং সংবেদনশীল।

নারী তার সিনেমায় কখনো নিছক ‘চরিত্র’ নয়, বরং একটি শক্ত স্বর, এক প্রতিবাদ।

ঋতু যখন ‘চিত্রাঙ্গদা’ বানালেন, তখনও সমকামিতা, লিঙ্গ পরিচয়ের তরলতা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা সাহসের ব্যাপার ছিল। কিন্তু তিনি থামেননি। নিজের জীবন ও শিল্প- দুটিতেই তিনি অনড় থেকেছেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘আমি নারী নই, পুরুষও নই- আমি ঋতুপর্ণ।’

এই আত্মপরিচয়ের দৃঢ়তা বাংলা সংস্কৃতির ইতিহাসে অনন্য। তিনি ছিলেন এক ‘লিক ভাঙা’ শিল্পী, যিনি চেয়েছিলেন সমাজের বাইরে থেকে সমাজকে চেনাতে।

ঋতুপর্ণ ঘোষ কেবল পরিচালক ছিলেন না। তিনি ছিলেন এক প্রখর সংলাপ-লেখক, এক দৃষ্টিপূর্ণ চিত্রনাট্যকার, একজন শক্তিশালী অভিনেতাও।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ বা তার নিজের অভিনীত ‘মেমরিজ ইন মার্চ’-এ সিনেমাগুলোতে তার অভিনয় ছিল গভীর, সংযত, অথচ আঘাত হানে হৃদয়ের গভীরে।

চিত্রগ্রহণেও তার ছিল মেপে রাখা সূক্ষ্ম সৌন্দর্যবোধ। সাদা-কালো ফ্রেমে পিরিয়ড পিস হোক বা আধুনিক নারীর ফ্র্যাজাইল রূপ- সবকিছুতেই ছিল ঋতুপর্ণর নিজস্ব ছাপ।

মাত্র ৪৯ বছর বয়সে ২০১৩ সালের ৩০ মে ঋতুপর্ণ ঘোষ পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। কিন্তু তার রেখে যাওয়া সিনেমাগুলো এখনো নিরন্তর কথা বলে যায়।

ঋতু বলতেন ‘শেষ কথা এখনো বলা হয়নি, আমি শুধু ছবির ভাষায় কথা বলতে চেয়েছি।’

সত্যি বলতে, তার সিনেমায় শেষ দৃশ্যটি কখনোই চূড়ান্ত নয়। তা যেন সবসময় এক নতুন শুরুর ডাক দেয়।

Link copied!