ঢাকা রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫

মারা গেলেন লেবাননের সাংস্কৃতিক কিংবদন্তি জিয়াদ রাহবানী

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ০১:০৩ পিএম
জিয়াদ রাহবানী। ছবি- সংগৃহীত

লেবাননের বিখ্যাত সুরকার, নাট্যকার এবং ব্যঙ্গকার জিয়াদ রাহবানী ৬৯ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। শনিবার (২৬ জুলাই) স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় রাজধানী বৈরুতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

জিয়াদ ছিলেন আরবি সংগীতের কিংবদন্তি ফাইরুজ এবং প্রয়াত সুরকার আসি রাহবানীর সন্তান। ১৯৭০-এর দশকে সামাজিক ও রাজনৈতিক বক্তব্যসমৃদ্ধ নাট্য ও সংগীতচর্চার মধ্য দিয়ে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন।

রাজনীতি, বহুমুখী শিল্পের স্বাক্ষর

জিয়াদ রাহবানী ছিলেন একজন বহুমুখী শিল্পী। নাট্যকার, সুরকার, পিয়ানোবাদক এবং তীব্র রাজনৈতিক ভাষ্যকার হিসেবে তিনি লেবাননের গৃহযুদ্ধ (১৯৭৫–১৯৯০) ও যুদ্ধ-পরবর্তী যুগের সামাজিক বাস্তবতা তুলে ধরেছেন।

তার সৃষ্ট নাটক ও সংগীত বারবার উঠে এসেছে শোষিত ও প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে। তার নাটকে প্রায়ই দেখা যেত হতাশ নাগরিক, প্রাক্তন বিপ্লবী কিংবা যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক বিভক্তিতে ক্লান্ত লেবানিজ মানুষের প্রতিচ্ছবি।

মাত্র ১৭ বছর বয়সে রাহবানীর রচিত নাটক ‘নাজল এল-সুরুর’ (Happiness Hotel) তাকে নাট্যজগতে পরিচিত করে তোলে। রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক এ নাটকটিতে শ্রেণিবৈষম্য ও সমাজের বিকৃত বাস্তবতা তুলে ধরা হয়।

অন্য একটি বিখ্যাত সৃষ্টি ‘আমেরিকাকি তাওয়িল’ (A Long American Film), ছিল গৃহযুদ্ধের সময়কার সামাজিক দুর্দশার উপরে নির্মিত একটি ব্যঙ্গচিত্র।

আরেকটি জনপ্রিয় নাটক ‘বেন্নেসবেহ লাবোকরা চৌ?’ (আগামীকাল সম্পর্কে কী?)–তে তিনি নিজেই ক্লান্ত একবার পিয়ানোবাদকের ভূমিকায় অভিনয় করেন, যেখানে ছিল তার মর্মস্পর্শী গান ও সংলাপ-  ‘তারা বলে আগামীকাল ভালো হবে, কিন্তু আজকের কী হবে?’

জিয়াদ ছিলেন প্রাচ্য জ্যাজ ধারার পথিকৃৎ। তিনি ঐতিহ্যবাহী আরবি সুরের সঙ্গে জ্যাজ, ফাঙ্ক এবং ধ্রুপদী সংগীতের মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি স্বতন্ত্র হাইব্রিড ধারার সৃষ্টি করেন। বৈরুতের হামরার নামকরা ক্লাবগুলোতে তার পিয়ানো পরিবেশনা কিংবদন্তি হয়ে আছে।

তার সংগীত ও সুর বিশেষ করে মা ফাইরুজের জন্য রচিত গানগুলো, লেবাননের সংগীতে রাজনৈতিক গভীরতা এবং সামাজিক ভাষ্য এনেছে।

ব্যক্তিত্ব ও উত্তরাধিকার

রাহবানী ছিলেন এক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বামপন্থি ও ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাবিদ। ফাইরুজ যেখানে সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক, সেখানে জিয়াদ ছিলেন প্রশ্নকারীর ভূমিকায়- যিনি সামাজিক দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক অবক্ষয় ও শ্রমিকশ্রেণির বেদনার ভাষ্য তৈরি করেছেন।

এই গুণী শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন লেবাননের রাজনৈতিক নেতারা। রাষ্ট্রপতি জোসেফ আউন তাকে আখ্যায়িত করেছেন, ‘একজন জীবন্ত বিবেক ও নিপীড়িতদের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে।

প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম বলেছেন, ‘জিয়াদ রাহবানী ছিলেন এমন একজন শিল্পী, যিনি যা অনেকেই বলার সাহস করেন না, তা নির্ভীকভাবে বলেছেন।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাহবানী জনজীবন থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও তার নাটক ও সংগীত অনলাইনে নতুন প্রজন্মের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লেবাননের তরুণদের আন্দোলনে আজও তার রচনার শব্দ ফিরে ফিরে আসে।