‘দ্য কেরালা স্টোরি’ -মুক্তির আগেই যার টিজারে দাবি করা হয়েছিল, কেরালার ৩২,০০০ নারী ইসলামিক স্টেটে যোগ দিয়েছেন। এই দাবিতে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য, মামলা গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শেষমেশ নির্মাতারা নিজেরাই টিজার তুলে নিয়ে বলেছিলেন, এটি কেবল তিনজন নারীর সত্য কাহিনির ফিকশনাল উপস্থাপনা। অথচ এই বিতর্কিত সিনেমাটিই এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারে জিতে নিয়েছে সেরা পরিচালকের মতো মর্যাদাসম্পন্ন স্বীকৃতি। আর এতেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে প্রবল প্রতিক্রিয়া।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এই পুরষ্কারপ্রাপ্তিকে আখ্যা দিয়েছেন ‘গভীর অপমান’ হিসেবে। তার ভাষায়, ‘এই সিনেমাটি মিথ্যা প্রচারে ভরপুর, যার উদ্দেশ্য কেরালার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো।’

সামাজিক মাধ্যমে দেয়া একটি পোস্টে তিনি বলেন, ‘জুরি বোর্ড একটি বিভাজনের ভাবধারাকে বৈধতা দিয়েছে।’ কংগ্রেস সাংসদ কেসি বেণুগোপাল সিনেমাটিকে সরাসরি বলেছেন ‘ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলার যোগ্য’, আর বিরোধীদলীয় নেতা ভি.ডি. সাথীসনের ভাষায়, ‘এটি ঘৃণা ছড়ানোর পরিকল্পিত প্রয়াস।’
অন্যদিকে নির্মাতা পক্ষের বক্তব্য, এটি তিন নারীর সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি একটি ফিকশনাল গল্প। যদিও বিতর্কিত টিজার ও ট্রেলার নিয়ে তাদের একাধিকবার সংশোধনী আনতে হয়েছে। আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখে নির্মাতারা সিনেমার শুরুতেই ‘এটি একটি ফিকশনাল কাহিনি’ -এই বিবৃতিও জুড়ে দেন।

বিজয়নের সমালোচনার জবাবে পরিচালক সুদীপ্ত সেন বলেন, তিনি রাজনীতিবিদ নন, তাই পাল্টা মন্তব্য করাও তার কাজ নয়। বরং তিনি মনে করেন, ভিএস অচ্যুতানন্দনের ‘কেরালা আইএসআইএস-এর পথে’ মন্তব্য থেকেই ছবির ভাবনা এসেছে।
তার ভাষায়, ‘ছবির প্রতিটি দৃশ্যকে আমি মন থেকে সমর্থন করি, সেন্সর বোর্ড একটিও দৃশ্য কাটেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘১০-১২ বছরের পরিশ্রমে বানানো এই ছবি আজ মানুষের ভালোবাসা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি- দুটোই পেয়েছে।’
চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এই পুরষ্কারপ্রাপ্তি শুধু শিল্পের স্বীকৃতি নয়, বরং রাজনৈতিক একটি বার্তা বহন করে। এক সমালোচক বলেন, ‘এটি নিছক সিনেমা নয়, বরং মোদি সরকারের সাংস্কৃতিক রাজনীতির একটি হাতিয়ার।’ কেরালার বামপন্থী ও কংগ্রেস নেতৃত্ব দুই পক্ষই এটিকে সংঘ পরিবারের প্রোপাগান্ডা বলেই আখ্যা দিচ্ছে।

এই সিনেমাকে ঘিরে একাধিক ‘বিকল্প ন্যারেটিভ’ও উঠে এসেছে। যেমন, নির্মাতা সনু কুম্মিল নির্মাণ করেছেন প্রামাণ্যচিত্র ‘দ্য আননোন কেরালা স্টোরিজ’, যেখানে ছয়টি বাস্তব গল্পে তুলে ধরা হয়েছে কেরালার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।
সব মিলিয়ে প্রশ্ন একটাই -যে সিনেমাটি মুক্তির আগে থেকেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, আদালতের দ্বারস্থ হওয়া, ও সত্য-মিথ্যার মিশেল নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল, সেই সিনেমাই কীভাবে দেশের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র সম্মান পায়? এই প্রশ্নেই এখন উত্তাল কেরালা এবং তার বাইরেও বহু গণতন্ত্রপ্রিয় দর্শক।
আপনার মতামত লিখুন :