খ্যাতিমান চিত্রনায়ক ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ সাত মাস ধরে অসুস্থ। তিনি বর্তমানে লন্ডনে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও পুরোপুরি সংক্রামুক্ত নন।
এরই মধ্যে তার রোগ মুক্তির জন্য চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। তারকাদের পাশপাশি বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন এবং দেশ-বিদেশ মিলিয়ে সবাই তার জন্য দোয়া করছেন।
এদিকে, সৌদি আরবের মাদানিতে নিরাপদ সড়ক চাই- এর সবচেয়ে বড় সংগঠন গত বছর রমজান মাসে ইলিয়াস কাঞ্চন এবং অভিনেতা-নির্মাতা হাসান জাহাঙ্গীর মদিনা শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।
চলতি বছর পবিত্র মদিনার পুণ্যভূমিতে ইলিয়াস কাঞ্চনের যাওয়ার কথা থাকলেও ব্রেন টিউমারের চিকিৎসার কারণে যেতে পারেনি বলে জানা গেছে। তার অবর্তমানে নতুন কমিটি হাসান জাহাঙ্গীরকে প্রধান অতিথি করে মদিনার মেরিডিয়ান হোটেলে সম্প্রতি দোয়ার আয়োজন করেন সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সংশ্লিষ্টরা।
দোয়ার আগে ইলিয়াস কাঞ্চনের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়া ও সফলতা নিয়ে হাসান জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চন শুধু পর্দার সুপারস্টার হিরো নন, বাস্তবেরও হিরো। ইলিয়াস কাঞ্চন নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের মাধ্যমে রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনা নির্মূল করার জন্য নিরলস চেষ্টা করে আসছিলেন। দেশ ও মানুষের জন্য তার মতো উদার মনের মানুষ, সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে; প্রতিটা ক্ষেত্রে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। কাঞ্চন ভাইয়ের মতো অন্য তারকারা সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখের পাশে এভাবে দাঁড়ালে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে যেতাম। কিন্তু কাঞ্চন ভাইয়ের মতো ত্যাগ স্বীকার করে নিঃস্বার্থ ভাবে কেউ এগিয়ে আসে না। বেশির ভাগ তারকা এখন থেকে উপার্জন করে নিজেদের আখের গোছায়।’
‘বড় বড় দেশে গ্রীন কার্ডের আশায় দেশ ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু কাঞ্চন ভাই দেশের মানুষকে ভালোবাসে বলে কোন দিন গ্রীন কার্ড তো দূরের কথা বিদেশে স্থায়ী হওয়ার কথা চিন্তাও করেনি। আজ এই সুন্দর মনের মানুষটি ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। কাঞ্চন ভাইয়ের এই অবস্থায় অনেকে আবার চিত্রনায়িকা দিতিকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছেন। এটা কি আদৌ ঠিক হচ্ছে। আসুন আমরা ঐসব মানুষকে ঘৃণা করি, যারা ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক বিষয়ে সব কিছু না জেনে শুনে, আজেবাজে মন্তব্য করছেন।’
হাসান জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চন এবং প্রয়াত এটিএম শামসুজ্জামান ৯০ দশকের শেষে আমার নির্দেশানায় কাজ করেছেন অসংখ্য টিভিসি ও নাটকে। কয়েক মাস আগেও আমেরিকা গিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার কিছু কাজে তার যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। তার সঙ্গে প্রিয়দর্শনী মৌসুমী’সহ আরও তারকারা থাকবেন। আমার গল্পও রেডি। কিন্তু হঠাৎ তার অসুস্থতার খবর।’
এই অভিনেতা বলেন, ‘গুণী এই মানুষদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। সবচেয়ে বড় শিক্ষা তাদের আদর্শ। পর্দায় তারা কাজ করলেও বাস্তবে দুজনেই ছিলেন পরহেজগার ও নীতিবান। এটিএম শামসুজ্জামানের অভাব যেমন কেউ পূরণ করতে পারিনি, তেমনি বাংলার সুপারস্টার কাঞ্চন ভাইয়ের বিকল্পও কেউ হতে পারবে না। সংস্কৃতি অঙ্গনে তিনি অনেক কিছু দিয়েছেন। এবার আমাদের দেওয়ার পালা, আর সেটা হচ্ছে তার প্রতি ভালোবাসা এবং দোয়া। আসুন আমরা বড় মনের এই মানুষটির জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দুই হাত তুলে ফরিয়াদ করি আল্লাহ যেন পুরোপুরি সুস্থ করে কাঞ্চন ভাইকে। আবার আমাদের মধ্যে ফিরিয়ে দেন।’
কয়েক মাস আগে হাসান জাহাঙ্গীরের পরিচালনায় একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে অংশ নেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন