ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী ১১ অক্টোবরের মধ্যেই ইসরায়েলি জিম্মিরা মুক্তি পেতে পারেন বলে ওয়াকিবহাল মহলের খবর।
তবে চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বন্দি মুক্তি নিয়ে টালবাহানা করার অভিযোগ তুলেছে হামাস। বিশেষ করে তাদের নিহত নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও তার ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ারের মরদেহ ফেরত দেওয়া নিয়ে। এ ছাড়া ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট বিবেচিত মারওয়ান বারঘৌতির মুক্তির আলোচনা ‘ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব’ করা ইসরায়েলের অপকৌশল। কারণ ইতিপূর্বেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘তাকে মুক্তি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
গত বছরের ১৬ অক্টোবর ইসরায়েলি আক্রমণে নিহত হন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইয়াহিয়া ইবরাহিম হাসান সিনওয়ার। তার মরদেহ নিয়ে যায় ইসরায়েলি বাহিনী। বুধবার (৮ অক্টোবর) হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও তার ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ারের মরদেহ ফেরত দেবে না ইসরায়েল। তাদের মরদেহ ফেরতের অনুরোধ জানিয়েছিল হামাস। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে এ তথ্য জানিয়েছেন।
হামাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি সরকার কর্তৃক চুক্তি অনুমোদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত জিম্মিদের হস্তান্তর করা হবে। হামাস কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃত জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধার করতে আরও সময় লাগবে। তাদের সংখ্যা প্রায় ২৮ জন বলে মনে করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তাদের হাতে থাকা অন্তত ২০ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। বিনিময়ে এক হাজার ৯৫০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে তেল আবিব। এর মধ্যে প্রায় ২৫০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ও বাকিরা যুদ্ধ শুরুর পর গ্রেপ্তার হওয়া বন্দি।
এদিকে হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ওসামা হামদান কাতারি সম্প্রচারক আল-আরাবির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গাজায় যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘এই চুক্তির মূল শর্তই হলো যুদ্ধের সমাপ্তি, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে হবে। এটি শুধু হামাসের অবস্থান নয়, চুক্তিতেই এটি উল্লেখ করা হয়েছে এবং ইসরায়েলও এতে স্বাক্ষর করেছে। এটি কোনো অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি নয়, বরং পূর্ণ যুদ্ধবিরতি।’
আলোচনার সঙ্গে যুক্ত এক ফিলিস্তিনি সূত্র বৃহস্পতিবার সকালে সংবাদমাধ্যম ওয়াইটেন-কে জানায়, শার্ম আল-শেখে অবস্থানরত ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল এখনো মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের তালিকা চূড়ান্ত করেনি। সূত্রটির ভাষায়, ‘চূড়ান্ত তালিকা এখনো নির্ধারিত হয়নি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আলোচনা চলছে।’
জানা গেছে, ফিলিস্তিনি রাজনীতির সবচেয়ে প্রতীকী বন্দিদের অন্যতম মারওয়ান বারঘৌতি। ফাতাহ দলের এই সিনিয়র নেতা বহু ফিলিস্তিনির কাছে ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিবেচিত। মুক্তি পেতে যাওয়া বন্দিদের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে এখনো আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। হামাস জোর দিয়ে বলেছে, ‘তার মুক্তি চুক্তির অংশ করতেই হবে।’
হামাসের আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাউই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, তিনি বন্দিদের তালিকা পরিবর্তনের মাধ্যমে চুক্তি বাস্তবায়নের আগেই তা ভঙ্গ করার চেষ্টা করছেন। হামাসের এক মুখপাত্র আল-জাজিরাকে জানান, ইসরায়েল ‘সময়সীমা ও তালিকা নিয়ে খেলছে’ এবং মধ্যস্থতাকারীদের আহ্বান জানান ইসরায়েলকে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে চাপ দেওয়ার জন্য।
হামাস কর্মকর্তাদের দাবি, এই চুক্তি গাজা যুদ্ধের সমাপ্তির সূচনা নির্দেশ করে। তবে তারা অভিযোগ করেন, ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার, বন্দিদের তালিকা এবং বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করছে এবং বিষয়গুলো এড়িয়ে যাচ্ছে।’ তারা টালবাহানা করছে।
তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ইয়াহিয়া সিনওয়ার ইসরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তিতে পরিণত হন। পরের বছর অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযানে তিনি নিহত হন। তার ছোট ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ার পরবর্তীতে হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডের সামরিক নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন। তবে চলতি বছর তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে নিহত হন। জুন মাসে ইসরায়েলি সেনারা তার মরদেহ উদ্ধার করে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন